আদিলালনকর্তা
ভ্রূণাকারে সৃষ্টি হওয়ার পর এবং ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মাতৃজঠরে সন্তান লালনপালনকারী সাঁইকে আদিলালনকর্তা বলে। যেমন- লালন, মুহাম্মদ, লোকনাথ।
অন্তলালনকর্তা
ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সন্তান যার নিকট লালিতপালিত হয় তাকে অন্তলালনকর্তা বলে। যেমন- পিতা-মাতা, পালকপিতা, পালকমাতা ইত্যাদি বিধায় মরমীকবি লালনসাঁইজি বিরচিত লালনাদির মধ্যে আমরা ভনিতারূপে ব্যবহৃত যে লালনের পরিচয় পাই তিনি আমাদের মতো মূর্তমান মানুষ বটে কিন্তু লালনাদির মধ্যে যে লালনের সন্ধান দান করা হয়েছে, তিনি যে আদৌ আমাদের মতো দেহধারী ও আকৃতিযুক্ত মূর্তমান মানুষ নন, তার প্রমাণস্বরূপ আমরা লালনসাঁইজির কয়েকটি পদ তুলে ধরছি।
১.“সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে, লালন বলে জাতির কিরূপ, দেখলেম না এ নজরে।”
২.“দেহের আত্মাকর্তা কারে বলি, কোন্ মুক্বামে তার সে গলি আওনা যাওনা, সে মহলে লালন কোন্জন, তাও লালনের ঠিক হলো না।”
ওপরোক্ত উদ্ধৃতি অংশে ‘লালন বলে’, ‘লালন কয়’ ও ‘লালনের ঠিক হলো না’ ইত্যাদি বাঙালী মরমীকবি লালন কিন্তু ‘লালন কী জাত’ ও ‘লালন কোন্জন’ ইত্যাদি মরমীকবি ব্যক্তিলালন নয় বরং তিনি স্বয়ং ‘লালন সাঁইজি’ বা সারাবিশ্বের পালনকর্তা সাঁই। তিনি স্বয়ং মানবের উপাস্য। তিনিই অনন্ত নামের অধিকারী, সারাবিশ্বের সব ভাষায় তাঁর অনন্ত নাম রয়েছে। এ ‘লালন’ কে ঢুঁড়ে বের করায় সাধক বা উপাসকের প্রকৃত উপাসনা। বাংভারতের সাধারণমানুষ বা সাধারণ বাউল শিল্পিগণ তো পরের কথা অনেক গবেষকও ‘মরমীকবি লালন’ ও ‘উপাস্য লালন’ এর মধ্যে ব্যবধান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তদ্রূপ ‘ব্যক্তি বিষ্ণু’ ও ‘উপাস্য বিষ্ণু’ এর মধ্যে ব্যবধান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন পুরানিরা। তদ্রূপ ‘ব্যক্তি মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ)’ ও ‘উপাস্য মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ)’ এর মধ্যে ব্যবধান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন কুরানীরা বিধায় বিভিন্ন শাস্ত্রীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একের পর এক সৃষ্টি হচ্ছে দল ও উপদলের।
আবার তিনি যে আমাদের মতই একজন মানুষ তার প্রমাণস্বরূপ আমরা লালনসাঁইজির কয়েকটি লালনের পদ তুলে ধরতে পারি। যেমন- “জগৎ বেড়ে জাতের কথা, লোকে গৌরব করে যথাতথা, লালন সে জাতের ফাতা, বিকিয়েছে সাধবাজারে॥” এরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও মতানৈক্যের নিরসন করতে হলে, আগে আমাদের লালন-সত্তাটির প্রকারভেদ জানতে হবে। আরো জানতে হবে একজন মূর্তমান মানুষ বা প্রাণী একই সময়ে বিশ্বের সর্বত্র সমানভাবে বিরাজ করতে পারেন না। কিন্তু দৈবিকা বা প্রতীতিগণ তাদের দেহ না থাকায়, তাঁরা একই সময়ে বিশ্বের সর্বত্র সমানভাবে বিরাজ করতে পারেন। মূর্তমান জীব কখনো জাতি কুল ও মানের ঊর্ধ্বে হতে পারে না। জাতি কুল ও মানের ঊর্ধ্বে হতে পারেন একমাত্র দৈবিকা বা প্রতীতিগণ। যেহেতু তাদের মূর্তমান দেহ নেই। আমাদের আলোচ্য লালন হলেন মানবদেহ নামক দেবালয়ের একজন বিশিষ্ট দৈবিকা বা প্রতীতি- যাকে আরবিতে মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺪ), ফার্সিতে খোদা (ﺨﺪﺍ) এবং ইংরেজিতে God বলে।
ভ্রূণাকারে সৃষ্টি হওয়ার পর এবং ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মাতৃজঠরে সন্তান লালনপালনকারী সাঁইকে আদিলালনকর্তা বলে। যেমন- লালন, মুহাম্মদ, লোকনাথ।
অন্তলালনকর্তা
ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সন্তান যার নিকট লালিতপালিত হয় তাকে অন্তলালনকর্তা বলে। যেমন- পিতা-মাতা, পালকপিতা, পালকমাতা ইত্যাদি বিধায় মরমীকবি লালনসাঁইজি বিরচিত লালনাদির মধ্যে আমরা ভনিতারূপে ব্যবহৃত যে লালনের পরিচয় পাই তিনি আমাদের মতো মূর্তমান মানুষ বটে কিন্তু লালনাদির মধ্যে যে লালনের সন্ধান দান করা হয়েছে, তিনি যে আদৌ আমাদের মতো দেহধারী ও আকৃতিযুক্ত মূর্তমান মানুষ নন, তার প্রমাণস্বরূপ আমরা লালনসাঁইজির কয়েকটি পদ তুলে ধরছি।
১.“সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে, লালন বলে জাতির কিরূপ, দেখলেম না এ নজরে।”
২.“দেহের আত্মাকর্তা কারে বলি, কোন্ মুক্বামে তার সে গলি আওনা যাওনা, সে মহলে লালন কোন্জন, তাও লালনের ঠিক হলো না।”
ওপরোক্ত উদ্ধৃতি অংশে ‘লালন বলে’, ‘লালন কয়’ ও ‘লালনের ঠিক হলো না’ ইত্যাদি বাঙালী মরমীকবি লালন কিন্তু ‘লালন কী জাত’ ও ‘লালন কোন্জন’ ইত্যাদি মরমীকবি ব্যক্তিলালন নয় বরং তিনি স্বয়ং ‘লালন সাঁইজি’ বা সারাবিশ্বের পালনকর্তা সাঁই। তিনি স্বয়ং মানবের উপাস্য। তিনিই অনন্ত নামের অধিকারী, সারাবিশ্বের সব ভাষায় তাঁর অনন্ত নাম রয়েছে। এ ‘লালন’ কে ঢুঁড়ে বের করায় সাধক বা উপাসকের প্রকৃত উপাসনা। বাংভারতের সাধারণমানুষ বা সাধারণ বাউল শিল্পিগণ তো পরের কথা অনেক গবেষকও ‘মরমীকবি লালন’ ও ‘উপাস্য লালন’ এর মধ্যে ব্যবধান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তদ্রূপ ‘ব্যক্তি বিষ্ণু’ ও ‘উপাস্য বিষ্ণু’ এর মধ্যে ব্যবধান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন পুরানিরা। তদ্রূপ ‘ব্যক্তি মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ)’ ও ‘উপাস্য মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ)’ এর মধ্যে ব্যবধান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন কুরানীরা বিধায় বিভিন্ন শাস্ত্রীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একের পর এক সৃষ্টি হচ্ছে দল ও উপদলের।
আবার তিনি যে আমাদের মতই একজন মানুষ তার প্রমাণস্বরূপ আমরা লালনসাঁইজির কয়েকটি লালনের পদ তুলে ধরতে পারি। যেমন- “জগৎ বেড়ে জাতের কথা, লোকে গৌরব করে যথাতথা, লালন সে জাতের ফাতা, বিকিয়েছে সাধবাজারে॥” এরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও মতানৈক্যের নিরসন করতে হলে, আগে আমাদের লালন-সত্তাটির প্রকারভেদ জানতে হবে। আরো জানতে হবে একজন মূর্তমান মানুষ বা প্রাণী একই সময়ে বিশ্বের সর্বত্র সমানভাবে বিরাজ করতে পারেন না। কিন্তু দৈবিকা বা প্রতীতিগণ তাদের দেহ না থাকায়, তাঁরা একই সময়ে বিশ্বের সর্বত্র সমানভাবে বিরাজ করতে পারেন। মূর্তমান জীব কখনো জাতি কুল ও মানের ঊর্ধ্বে হতে পারে না। জাতি কুল ও মানের ঊর্ধ্বে হতে পারেন একমাত্র দৈবিকা বা প্রতীতিগণ। যেহেতু তাদের মূর্তমান দেহ নেই। আমাদের আলোচ্য লালন হলেন মানবদেহ নামক দেবালয়ের একজন বিশিষ্ট দৈবিকা বা প্রতীতি- যাকে আরবিতে মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺪ), ফার্সিতে খোদা (ﺨﺪﺍ) এবং ইংরেজিতে God বলে।
সাঁইজি উপাধি
গ্রহণের তাৎপর্য
আধ্যাত্মিকজ্ঞানে একজন জ্ঞানী পাকাগুরুর নিকট হতে ভেদবিদ্যা বা পরাবিদ্যা বা আধ্যাত্মিকবিদ্যা বা ভেদবিধান অর্জন করে শুভযোগে যেসব সাধক সাঁইয়ের প্রত্যক্ষ দর্শনলাভ করতে সক্ষম হন- সেসব সাধককেই সাঁইজি উপাধি প্রদান করা হয়। সাঁইজি পরিভাষাটি মূলতঃ রূপক সাহিত্যের- ১.আউল ২.বাউল ৩.নাড়া ও ৪.সাঁইজি- এ চতুর্সাধন পথের সর্বশেষ স্তর। সাঁইয়ের প্রত্যক্ষদর্শনকারী বা পরোক্ষদর্শনকারী উভয়কেই সাঁইজি উপাধিতে ভূষিত করা হয়। যেমন- এম.বি.বি.এস (M.B.B.S) উত্তীর্ণ না হয়ে কেউ নামের শেষে পদবিরূপে এম.বি.বি.এস (M.B.B.S) লেখতে পারেন না। তদ্রূপ কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাঁইদর্শন না করে সাঁইজি উপাধি গ্রহণ করতে পারেন না। যদি কেউ এরূপ করেন তবে ভুয়া এম.বি.বি.এস (M.B.B.S) এর মতো তিনিও ভুয়া সাঁইজি।
কোন সাধকের সাঁই দর্শনলাভের পর প্রমাণসাপেক্ষ কোন বিশেষ বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে ‘সাঁইজি’ উপাধি প্রদান করা হয়। সাঁইজির চিহ্নস্বরূপ দীক্ষাগুরুর পক্ষ থেকে সাধককে শ্বেতবর্ণের উষ্ণীষ এবং শ্বেতবর্ণের ওড়নি প্রদান করা হয়। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উক্ত সাধককে গুরুপদে অধিষ্ঠিত করা হয়। আরবিভাষায় এ অনুষ্ঠানকে খিলাফত (ﺨﻼﻔﺕ) বলে। গরুপদপ্রাপ্ত বা প্রতিনিধিত্বপ্রাপ্ত বা খিলাফত (ﺨﻼﻔﺕ) প্রাপ্ত সাধককে আরবিভাষায় প্রতিনিধি বা খলিফা (ﺨﻟﻔﺔ) বলে এবং বাংলা ভাষায় গুরু বা গোঁসাই বলা হয়। কোন সাঁইজি সাধকের শিষ্য সাধনবলে গুরুর নিকট হতে ‘সাঁইজি’ উপাধিলাভ করার পর গুরু ও শিষ্য এক ও অভিন্ন স্তর প্রাপ্ত হন। অতঃপর গুরু ও শিষ্য পরস্পরকে প্রণাম ও অভিবাদন করে পরস্পরকে সম্মান প্রদর্শন করেন। সাঁইদর্শনলাভকারী শিষ্য সে বৈঠক হতেই গুরুপদ প্রাপ্ত হন। অতঃপর গুরুর আদেশ অনুসারে তিনিও সাধারণ মানুষকে আধ্যাত্মিকশিক্ষাদীক্ষা প্রদান করতে আরম্ভ করেন। যে সাধক সাঁইদর্শনলাভ করতে সক্ষম হবেন তিনিই সাঁইজি উপাধি প্রাপ্ত হবেন। সাঁইজি পরিভাষাটি কারো জন্যই নির্দিষ্ট নয়। ‘সাঁইজি’ উপাধিটি সব সাঁই দর্শনকারী সাধকের উপাধি বিশেষ। সাঁইজি স্তরে যারা উন্নীত হবেন তারাই সাঁইজি উপাধি প্রাপ্ত হবেন।
সাঁইজি পরিভাষাটির আরবি অনুবাদ হলো- নায়িবে রাসুল (ﻧﺎﺌﺐﺮﺴﻭﻞ) এবং ইংরেজি অনুবাদ হলো- Godship। সারাবিশ্বের লালনপালনকর্তার নামই হলো লালন বিধায় তাঁর নামের আগে ও পরে যত প্রকার পদবিই স্থাপন করা হোক না কেন তবুও ন্যূন হবে। কিন্তু কোন মূর্ত্যমান মানুষকে আমরা কখনো সাঁইজি বলতে পারি না। তবে যারা মানবদেহ হতে উদ্ঘাটিত সাঁই-সত্তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দর্শনলাভ করেছেন তাঁদের উপাধিই সাঁইজি। তাঁদের সাঁইজি বলে সম্বোধন করাতে কোন দোষ নেই।
আধ্যাত্মিকজ্ঞানে একজন জ্ঞানী পাকাগুরুর নিকট হতে ভেদবিদ্যা বা পরাবিদ্যা বা আধ্যাত্মিকবিদ্যা বা ভেদবিধান অর্জন করে শুভযোগে যেসব সাধক সাঁইয়ের প্রত্যক্ষ দর্শনলাভ করতে সক্ষম হন- সেসব সাধককেই সাঁইজি উপাধি প্রদান করা হয়। সাঁইজি পরিভাষাটি মূলতঃ রূপক সাহিত্যের- ১.আউল ২.বাউল ৩.নাড়া ও ৪.সাঁইজি- এ চতুর্সাধন পথের সর্বশেষ স্তর। সাঁইয়ের প্রত্যক্ষদর্শনকারী বা পরোক্ষদর্শনকারী উভয়কেই সাঁইজি উপাধিতে ভূষিত করা হয়। যেমন- এম.বি.বি.এস (M.B.B.S) উত্তীর্ণ না হয়ে কেউ নামের শেষে পদবিরূপে এম.বি.বি.এস (M.B.B.S) লেখতে পারেন না। তদ্রূপ কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাঁইদর্শন না করে সাঁইজি উপাধি গ্রহণ করতে পারেন না। যদি কেউ এরূপ করেন তবে ভুয়া এম.বি.বি.এস (M.B.B.S) এর মতো তিনিও ভুয়া সাঁইজি।
কোন সাধকের সাঁই দর্শনলাভের পর প্রমাণসাপেক্ষ কোন বিশেষ বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে ‘সাঁইজি’ উপাধি প্রদান করা হয়। সাঁইজির চিহ্নস্বরূপ দীক্ষাগুরুর পক্ষ থেকে সাধককে শ্বেতবর্ণের উষ্ণীষ এবং শ্বেতবর্ণের ওড়নি প্রদান করা হয়। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উক্ত সাধককে গুরুপদে অধিষ্ঠিত করা হয়। আরবিভাষায় এ অনুষ্ঠানকে খিলাফত (ﺨﻼﻔﺕ) বলে। গরুপদপ্রাপ্ত বা প্রতিনিধিত্বপ্রাপ্ত বা খিলাফত (ﺨﻼﻔﺕ) প্রাপ্ত সাধককে আরবিভাষায় প্রতিনিধি বা খলিফা (ﺨﻟﻔﺔ) বলে এবং বাংলা ভাষায় গুরু বা গোঁসাই বলা হয়। কোন সাঁইজি সাধকের শিষ্য সাধনবলে গুরুর নিকট হতে ‘সাঁইজি’ উপাধিলাভ করার পর গুরু ও শিষ্য এক ও অভিন্ন স্তর প্রাপ্ত হন। অতঃপর গুরু ও শিষ্য পরস্পরকে প্রণাম ও অভিবাদন করে পরস্পরকে সম্মান প্রদর্শন করেন। সাঁইদর্শনলাভকারী শিষ্য সে বৈঠক হতেই গুরুপদ প্রাপ্ত হন। অতঃপর গুরুর আদেশ অনুসারে তিনিও সাধারণ মানুষকে আধ্যাত্মিকশিক্ষাদীক্ষা প্রদান করতে আরম্ভ করেন। যে সাধক সাঁইদর্শনলাভ করতে সক্ষম হবেন তিনিই সাঁইজি উপাধি প্রাপ্ত হবেন। সাঁইজি পরিভাষাটি কারো জন্যই নির্দিষ্ট নয়। ‘সাঁইজি’ উপাধিটি সব সাঁই দর্শনকারী সাধকের উপাধি বিশেষ। সাঁইজি স্তরে যারা উন্নীত হবেন তারাই সাঁইজি উপাধি প্রাপ্ত হবেন।
সাঁইজি পরিভাষাটির আরবি অনুবাদ হলো- নায়িবে রাসুল (ﻧﺎﺌﺐﺮﺴﻭﻞ) এবং ইংরেজি অনুবাদ হলো- Godship। সারাবিশ্বের লালনপালনকর্তার নামই হলো লালন বিধায় তাঁর নামের আগে ও পরে যত প্রকার পদবিই স্থাপন করা হোক না কেন তবুও ন্যূন হবে। কিন্তু কোন মূর্ত্যমান মানুষকে আমরা কখনো সাঁইজি বলতে পারি না। তবে যারা মানবদেহ হতে উদ্ঘাটিত সাঁই-সত্তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দর্শনলাভ করেছেন তাঁদের উপাধিই সাঁইজি। তাঁদের সাঁইজি বলে সম্বোধন করাতে কোন দোষ নেই।
লালনের প্রকারভেদ
লালন মোট চার প্রকার। যথা- ১.ব্যক্তিলালন ২.লালন কাব্য ৩.লালন লৌকিকা ও ৪.লালন দৈবিকা।
ব্যক্তিলালন
দেহ আত্মা মন ও জ্ঞানসহ মরমীবাণী লালনাদির লেখককেই ব্যাক্তিলালন বলা হয়।
ব্যক্তিলালনের প্রকারভেদ
ব্যক্তিলালন দুই প্রকার। যথা- ১.প্রয়াণপূর্ব লালন ও ২.প্রয়াণোত্তর লালন।
প্রয়াণপূর্ব লালন
লালন সাঁইজির প্রয়াণপূর্ব সব কার্যকলাপকে প্রয়াণপূর্ব লালন বলে।
লালন সাঁইজি ছদ্মনামধারী ক্ষণজন্মা এ বাঙালী মহাপুরুষের অন্যান্য মহাসাধকগণের মতো সামাজিক নাম বসতি ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগতযোগ্যতা কিছুই জানা যায় না। তবে তিনি তৎকালে বাংলা ও আরবি উভয় প্রাঠ্যক্রমে সর্বোচ্চ উপাধি অর্জন করেছিলেন তা তার অনবদ্য সৃষ্টি অনন্য লালনাদিতে অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি গত ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে আবির্ভূত হন এবং গত ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া অঞ্চলের ছেউড়িয়া গ্রামে প্রয়াণলাভ করেন। ব্যক্তিলালন আমাদের মতো আকার ও আকৃতিযুক্ত মূর্তমান একজন মানুষ ছিলেন। তাঁরও রক্তমাংসে গড়া আমাদের মতো দেহ ছিল। তিনি আমাদের মতো খাওয়া স্নান ঘুম চলাফিরা ও খেলাধূলা ইত্যাদি সবই করতেন। তিনিও আমাদের মতো বিদ্যালয়ে গিয়ে রীতিমত অধ্যায়ন করে পাঠ্যক্রমের সর্বোচ্চ উপাধি অর্জন করেছিলেন। এমনকি আরবি ও বাংলা উভয় পাঠ্যক্রমের সর্বশেষ উপাধিও অর্জন করেছিলেন। তাঁর জীবনের এ সব বাস্তবতার উদাহরণের জন্য কোন প্রকার প্রমাণের প্রয়োজন নেই। তাঁর রচিত মরমী বাণীগুলোই এর জন্য যথেষ্ট। যারা বলেন যে, “সাঁইজি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলেন বা তিনি অক্ষরজ্ঞানহীন লোক ছিলেন! প্রভুর ইচ্ছায় অক্ষরজ্ঞানহীন লোকও মহাগ্রন্থাদি রচনা করতে পারেন। যেমন- বেদব্যাসও নিরক্ষর হওয়া সত্ত্বেও বেদবিন্যাসসহ ১৮টি পুরাণ প্রণয়ন করে করে গেছেন। তদ্রূপ হযরত মুহাম্মদ নিরক্ষর ছিলেন কিন্তু তিনিও কুরানের মতো বিশাল মহাগ্রন্থ রচনা করে গেছেন। নিজেরা লেখতে ও পড়তে না জানলেও মহাগ্রন্থ প্রণয়নে মহামানবগণের কোন সমস্যা হয় না। কারণ তাদের সাথে যেসব লোকজন অবস্থান করেন তাদের মধ্যে অনেকেই থাকেন উচ্চশিক্ষিত। উচ্চশিক্ষিত অনুসারিরাই মহামানবগণের মুখ নিঃসৃত বাণীগুলো সংকলন করে থাকেন ইত্যাদি।”
যারা এরূপ মতামত প্রকাশ করেন আমরা তাদেরকে বলি যে, এ বিংশশতাব্দির দ্বিতীয়দশকে বাস করে এরূপ বিজ্ঞানবিরোধী, যুক্তি ও দর্শন বিরোধী মতাবাদ বা গাণিতিক প্রমাণহীন ধারনা করা হিরোসিমায় বোমা বিষ্ফোরণের চেয়েও আরো অধিক অন্যায়। কারণ তাদের গোঁড়ামি তাদের ভাবি প্রজন্মের মধ্যে প্রবেশ করে জ্ঞানান্ধতার ঘুনে প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খেতে থাকবে। যারা বলেন যে- ‘সাঁইজি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় —- ইত্যাদি’ ধারণার সমাধান হলো- প্রতীতি বা দৈবিকারা নিরক্ষর হলেও তাঁদের অত্যন্ত সূক্ষ্ম অনুভূতি রয়েছে। যেমন- রসনা, নিরক্ষর হলেও রসনা- ১.টক ২.ঝাল ৩.লবণ ৪.কষা ৫.তিক্ত ও ৬.মিষ্ট- এ ছয়টি স্বাদ তিনি সঠিক ও সূক্ষ্মরূপেই বলে দিতে পারেন। তদ্রূপ পবনদেব (নাসিকা) নিরক্ষর হলেও সুঘ্রাণ ও দুর্গন্ধ সঠিকভাবে বলে দিতে পারেন বিধায় বলা যায়- একমাত্র প্রতীতি বা দৈবিকাগণের ব্যাপারে এরূপ কথা বলা যায় যে, নিরক্ষর হলেও তাঁরা গ্রন্থ প্রণয়ন করতে সক্ষম (যুক্তির ক্ষেত্রে) কিন্তু রক্তমাংসে গড়া মানুষের ক্ষেত্রে ‘সাঁইজি —– ইত্যাদি’ এরূপ কথা কখনই প্রযোজ্য নয়। হ্যাঁ লালন, বেদব্যাস ও মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ) সবাই প্রতীতি বিধায় তাঁদের পক্ষে হেন গ্রন্থ প্রণয়ন করা অসম্ভব ব্যাপার নয় (যুক্তির ক্ষেত্রে)।
প্রয়াণোত্তর লালন
লালনসাঁইজির প্রয়াণোত্তর অবস্থাকে প্রয়াণোত্তর লালন বলে।
লালনকাব্য
লালনসাঁইজির রচিত সব লালনাদিকে লালনকাব্য বলে।
লালনসাঁইজির কাব্য-সত্তাকে সংক্ষেপে লালন বলা হয়। যা বর্তমান সারাবিশ্বে ‘লালনগীতি’ নামে পরিচিত। বাংলাভাষার এ ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ তার জীবনে মোট সহস্র (১,০০০)টি লালন রচনা করেছিলেন বলে কথিত রয়েছে। তবে কোন কোন গবেষকের ধারণা তাঁর রচিত লালনের সংখ্যা আরো অধিক হতে পারে। তাঁর রচিত লালনের সবগুলো কারো নিকট একত্র গচ্ছিত নেই। যেসব লালনের মধ্যে ভনিতারূপে লালন পরিভাষাটি উল্লেখ রয়েছে আমরা শুধু সেগুলোকেই প্রকৃত লালনরূপে গ্রহণ করব। প্রকৃত লালনাদি সংগ্রহ করে তা নির্ভুলরূপে পাঠ করার জন্য অত্র গ্রন্থটিতে প্রতিটি শব্দ ও পরিভাষা সঠিকভাবে সংযোজন করতে আমরা প্রাণপণ চেষ্টাসাধনা করেছি।
লালন মোট চার প্রকার। যথা- ১.ব্যক্তিলালন ২.লালন কাব্য ৩.লালন লৌকিকা ও ৪.লালন দৈবিকা।
ব্যক্তিলালন
দেহ আত্মা মন ও জ্ঞানসহ মরমীবাণী লালনাদির লেখককেই ব্যাক্তিলালন বলা হয়।
ব্যক্তিলালনের প্রকারভেদ
ব্যক্তিলালন দুই প্রকার। যথা- ১.প্রয়াণপূর্ব লালন ও ২.প্রয়াণোত্তর লালন।
প্রয়াণপূর্ব লালন
লালন সাঁইজির প্রয়াণপূর্ব সব কার্যকলাপকে প্রয়াণপূর্ব লালন বলে।
লালন সাঁইজি ছদ্মনামধারী ক্ষণজন্মা এ বাঙালী মহাপুরুষের অন্যান্য মহাসাধকগণের মতো সামাজিক নাম বসতি ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগতযোগ্যতা কিছুই জানা যায় না। তবে তিনি তৎকালে বাংলা ও আরবি উভয় প্রাঠ্যক্রমে সর্বোচ্চ উপাধি অর্জন করেছিলেন তা তার অনবদ্য সৃষ্টি অনন্য লালনাদিতে অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি গত ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে আবির্ভূত হন এবং গত ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া অঞ্চলের ছেউড়িয়া গ্রামে প্রয়াণলাভ করেন। ব্যক্তিলালন আমাদের মতো আকার ও আকৃতিযুক্ত মূর্তমান একজন মানুষ ছিলেন। তাঁরও রক্তমাংসে গড়া আমাদের মতো দেহ ছিল। তিনি আমাদের মতো খাওয়া স্নান ঘুম চলাফিরা ও খেলাধূলা ইত্যাদি সবই করতেন। তিনিও আমাদের মতো বিদ্যালয়ে গিয়ে রীতিমত অধ্যায়ন করে পাঠ্যক্রমের সর্বোচ্চ উপাধি অর্জন করেছিলেন। এমনকি আরবি ও বাংলা উভয় পাঠ্যক্রমের সর্বশেষ উপাধিও অর্জন করেছিলেন। তাঁর জীবনের এ সব বাস্তবতার উদাহরণের জন্য কোন প্রকার প্রমাণের প্রয়োজন নেই। তাঁর রচিত মরমী বাণীগুলোই এর জন্য যথেষ্ট। যারা বলেন যে, “সাঁইজি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলেন বা তিনি অক্ষরজ্ঞানহীন লোক ছিলেন! প্রভুর ইচ্ছায় অক্ষরজ্ঞানহীন লোকও মহাগ্রন্থাদি রচনা করতে পারেন। যেমন- বেদব্যাসও নিরক্ষর হওয়া সত্ত্বেও বেদবিন্যাসসহ ১৮টি পুরাণ প্রণয়ন করে করে গেছেন। তদ্রূপ হযরত মুহাম্মদ নিরক্ষর ছিলেন কিন্তু তিনিও কুরানের মতো বিশাল মহাগ্রন্থ রচনা করে গেছেন। নিজেরা লেখতে ও পড়তে না জানলেও মহাগ্রন্থ প্রণয়নে মহামানবগণের কোন সমস্যা হয় না। কারণ তাদের সাথে যেসব লোকজন অবস্থান করেন তাদের মধ্যে অনেকেই থাকেন উচ্চশিক্ষিত। উচ্চশিক্ষিত অনুসারিরাই মহামানবগণের মুখ নিঃসৃত বাণীগুলো সংকলন করে থাকেন ইত্যাদি।”
যারা এরূপ মতামত প্রকাশ করেন আমরা তাদেরকে বলি যে, এ বিংশশতাব্দির দ্বিতীয়দশকে বাস করে এরূপ বিজ্ঞানবিরোধী, যুক্তি ও দর্শন বিরোধী মতাবাদ বা গাণিতিক প্রমাণহীন ধারনা করা হিরোসিমায় বোমা বিষ্ফোরণের চেয়েও আরো অধিক অন্যায়। কারণ তাদের গোঁড়ামি তাদের ভাবি প্রজন্মের মধ্যে প্রবেশ করে জ্ঞানান্ধতার ঘুনে প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খেতে থাকবে। যারা বলেন যে- ‘সাঁইজি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় —- ইত্যাদি’ ধারণার সমাধান হলো- প্রতীতি বা দৈবিকারা নিরক্ষর হলেও তাঁদের অত্যন্ত সূক্ষ্ম অনুভূতি রয়েছে। যেমন- রসনা, নিরক্ষর হলেও রসনা- ১.টক ২.ঝাল ৩.লবণ ৪.কষা ৫.তিক্ত ও ৬.মিষ্ট- এ ছয়টি স্বাদ তিনি সঠিক ও সূক্ষ্মরূপেই বলে দিতে পারেন। তদ্রূপ পবনদেব (নাসিকা) নিরক্ষর হলেও সুঘ্রাণ ও দুর্গন্ধ সঠিকভাবে বলে দিতে পারেন বিধায় বলা যায়- একমাত্র প্রতীতি বা দৈবিকাগণের ব্যাপারে এরূপ কথা বলা যায় যে, নিরক্ষর হলেও তাঁরা গ্রন্থ প্রণয়ন করতে সক্ষম (যুক্তির ক্ষেত্রে) কিন্তু রক্তমাংসে গড়া মানুষের ক্ষেত্রে ‘সাঁইজি —– ইত্যাদি’ এরূপ কথা কখনই প্রযোজ্য নয়। হ্যাঁ লালন, বেদব্যাস ও মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ) সবাই প্রতীতি বিধায় তাঁদের পক্ষে হেন গ্রন্থ প্রণয়ন করা অসম্ভব ব্যাপার নয় (যুক্তির ক্ষেত্রে)।
প্রয়াণোত্তর লালন
লালনসাঁইজির প্রয়াণোত্তর অবস্থাকে প্রয়াণোত্তর লালন বলে।
লালনকাব্য
লালনসাঁইজির রচিত সব লালনাদিকে লালনকাব্য বলে।
লালনসাঁইজির কাব্য-সত্তাকে সংক্ষেপে লালন বলা হয়। যা বর্তমান সারাবিশ্বে ‘লালনগীতি’ নামে পরিচিত। বাংলাভাষার এ ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ তার জীবনে মোট সহস্র (১,০০০)টি লালন রচনা করেছিলেন বলে কথিত রয়েছে। তবে কোন কোন গবেষকের ধারণা তাঁর রচিত লালনের সংখ্যা আরো অধিক হতে পারে। তাঁর রচিত লালনের সবগুলো কারো নিকট একত্র গচ্ছিত নেই। যেসব লালনের মধ্যে ভনিতারূপে লালন পরিভাষাটি উল্লেখ রয়েছে আমরা শুধু সেগুলোকেই প্রকৃত লালনরূপে গ্রহণ করব। প্রকৃত লালনাদি সংগ্রহ করে তা নির্ভুলরূপে পাঠ করার জন্য অত্র গ্রন্থটিতে প্রতিটি শব্দ ও পরিভাষা সঠিকভাবে সংযোজন করতে আমরা প্রাণপণ চেষ্টাসাধনা করেছি।
লালনাদি হতে
প্রাপ্ত শিক্ষা
মহাত্মা লালনসাঁইজি বিরচিত লালনাদি পাঠের দ্বারা আমরা সুখী ও ছোট পরিবার গঠন, পরমায়ু বৃদ্ধি, শুক্রনিয়ন্ত্রণ, জন্মনিয়ন্ত্রণ, সুস্বাস্থ্যরক্ষা, সাঁইদর্শন, কাঁইদর্শন, আত্মশুদ্ধি, সচ্চরিত্র গঠন ও আত্মসংযমসহ বিশ্বব্যাপী শান্তি ও শৃংখলা প্রতিষ্ঠার জন্য পারিবারিক ও সামাজিক অনুপম শিক্ষা পেয়ে থাকি। সব লালনাদির প্রতিটি পদেই মানুষের মনের পশুত্বভাব বিদুরিত করে সুস্বভাব ও মানসত্ব অর্জনের আকুল আহ্বান জানানো হয়েছে। যেমন- “সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন, সত্য সুপথ না চিনলে, পাবি না মানুষের দরশন।”
উক্ত চরণাদির দ্বারা সত্য ও সুপথে আগমনের জন্য সারাবিশ্ববাসীকে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। যতদল, যত শাস্ত্রীয় মতবাদ, যতপথ ও যতমত রয়েছে সর্ব প্রকার মতবাদিকে উন্মুক্তভাবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে প্রকৃত সত্যপথ চিনতে না পারলে তরলমানুষ সাঁইয়ের সন্ধান পাওয়া যাবে না। বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে, বিশ্বের প্রতিটি পদার্থের- ১.কঠিন ২.তরল ও ৩.বায়বীয়- এ তিনটি অবস্থা। পদার্থের এ তিনটি অবস্থাকে আধ্যাত্মিকবিজ্ঞানে ১.আকার ২.সাকার ও ৩.নিরাকার বলা হয়। যেহেতু মানুষ পদার্থ এবং কঠিন পদার্থ তবে মানুষেরও তরল ও বায়বীয় রূপ অবশ্যই রয়েছে বিধায় তিনি বলেছেন- কঠিনপদার্থরূপ মানুষ তো আমরা সবাই। কিন্তু তরলপদার্থরূপ মানুষ ও বায়বীয় পদার্থরূপ মানুষও আমাদের ভিতরেই বাস করে। যদি সে তরল পদার্থরূপ মানুষ ও বায়বীয় পদার্থরূপ মানুষের সন্ধান করতে হয়, তবে অবশ্যই আমাদের সত্য ও সুপথ চিনতে হবে। কঠিন পদার্থরূপ মানুষের উপাস্য হলো, তরল পদার্থরূপ মানুষ। অর্থাৎ কঠিন আকারধারী মানুষের প্রকৃত উপাস্য হলো তরলমানুষ বিধায় মানুষ হয়ে মানুষ মৃগয়া করাই সাধকের প্রকৃত সাধনা। যেমন- মরমীকবি জালাল লিখেছেন-
“বাঘের ডাকে অন্তর কাঁপে মধুপুরের সে ঘরে,
কে যাবি শিকারে মানুষ কে যাবি শিকারে।
১.বাঘিনীর নাকটি বোঁচা
কেউ তারে দিওনা খোঁচা,
বাঘিনীর কোমর উঁচা
চায় সে আড়ে আড়ে,
যে শিকারী গিয়াছিল বাঘ ধরিবারে,
কত শিকারী ধরে খেল গুলি বন্দুক সহকারে।
২.শিকারীরা নিশিকালে
নীরবে যাও জঙ্গলে,
নিশানাটা ঠিক করিয়া বসে রও আড়ালে,
এমন জোরে ছাড়ো গুলি
যেন এক গুলিতেই মরে,
ধন্যরে শিকারী বেটা ধন্য আমি বলি তারে।
৩.শাহজালাল দরবেশ বলে
যাবি যদি বাঘ জঙ্গলে,
ভাবের বন্দুক প্রেমের গুলি হাতে নাওরে তুলে,
পঞ্চস্থানে পঞ্চগুলি যে লাগাতে পারে,
বাঘের সঙ্গে করলে পিরিত
এক গুলিতে ঢলে পড়ে।”
আমাদের মানবদেহের মধ্যে সাঁই কখনো বায়বীয় মানুষ আবার কখনো তরলমানুষরূপে বিরাজ করেন। বায়বীয় মানুষ ও তরলমানুষরূপে বিরাজিত সাঁইয়ের দর্শনলাভ করাই সাধকের একমাত্র লক্ষ্য। সাঁইয়ের দর্শনলাভকে কেন্দ্র করেই শাস্ত্রীয় মতানুসারিগণের এতসব শাস্ত্রীয়সংস্কার। পূজা, উপোস ও ধ্যানসহ সব কায়িক ও মানসিক উপাসনার মূল হলো সাঁইদর্শন। তিনি অন্যত্র লিখেছেন- “সাঁই আমার কখন খেলে কোন খেলা, জীবের কী সাধ্য আছে, গণে পড়ে তাই বলা।” কারণ সাঁই কখনো বায়বীয় মানুষরূপে আবার কখনো তরলমানুষরূপে আবার কখনো জীবদেহ ধারণ করে কঠিনমানুষরূপে এ নিখিল ধামে বিরাজ করছেন। তিনি কখন কোনরূপ ধারণ করেন তা সূক্ষ্মজ্ঞানী মহান মনীষীগণ ব্যতীত সাধারণ মানুষ জানতে ও বুঝতে পারেন না। আবার সাঁইদর্শনের জন্য চেষ্টাসাধনা না করে অলস হয়ে বসে থাকে, এরূপ মনের উদ্দেশ্যে তিনি দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন- “মন সহজে কী সহি হবা, গাদার ‘পর মুগর পড়লে, সে দিনেগা টের পাবা।” আমাদের পালনকর্তা সাঁইয়ের দর্শনের জন্য তিনি বর্ণনা করেছেন- “ধরো চোর হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতে, সে কিরে সামান্য চোরা, ধরবি কোণা কানছিতে।”
মহাত্মা লালনসাঁইজি বিরচিত লালনাদি পাঠের দ্বারা আমরা সুখী ও ছোট পরিবার গঠন, পরমায়ু বৃদ্ধি, শুক্রনিয়ন্ত্রণ, জন্মনিয়ন্ত্রণ, সুস্বাস্থ্যরক্ষা, সাঁইদর্শন, কাঁইদর্শন, আত্মশুদ্ধি, সচ্চরিত্র গঠন ও আত্মসংযমসহ বিশ্বব্যাপী শান্তি ও শৃংখলা প্রতিষ্ঠার জন্য পারিবারিক ও সামাজিক অনুপম শিক্ষা পেয়ে থাকি। সব লালনাদির প্রতিটি পদেই মানুষের মনের পশুত্বভাব বিদুরিত করে সুস্বভাব ও মানসত্ব অর্জনের আকুল আহ্বান জানানো হয়েছে। যেমন- “সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন, সত্য সুপথ না চিনলে, পাবি না মানুষের দরশন।”
উক্ত চরণাদির দ্বারা সত্য ও সুপথে আগমনের জন্য সারাবিশ্ববাসীকে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। যতদল, যত শাস্ত্রীয় মতবাদ, যতপথ ও যতমত রয়েছে সর্ব প্রকার মতবাদিকে উন্মুক্তভাবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে প্রকৃত সত্যপথ চিনতে না পারলে তরলমানুষ সাঁইয়ের সন্ধান পাওয়া যাবে না। বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে, বিশ্বের প্রতিটি পদার্থের- ১.কঠিন ২.তরল ও ৩.বায়বীয়- এ তিনটি অবস্থা। পদার্থের এ তিনটি অবস্থাকে আধ্যাত্মিকবিজ্ঞানে ১.আকার ২.সাকার ও ৩.নিরাকার বলা হয়। যেহেতু মানুষ পদার্থ এবং কঠিন পদার্থ তবে মানুষেরও তরল ও বায়বীয় রূপ অবশ্যই রয়েছে বিধায় তিনি বলেছেন- কঠিনপদার্থরূপ মানুষ তো আমরা সবাই। কিন্তু তরলপদার্থরূপ মানুষ ও বায়বীয় পদার্থরূপ মানুষও আমাদের ভিতরেই বাস করে। যদি সে তরল পদার্থরূপ মানুষ ও বায়বীয় পদার্থরূপ মানুষের সন্ধান করতে হয়, তবে অবশ্যই আমাদের সত্য ও সুপথ চিনতে হবে। কঠিন পদার্থরূপ মানুষের উপাস্য হলো, তরল পদার্থরূপ মানুষ। অর্থাৎ কঠিন আকারধারী মানুষের প্রকৃত উপাস্য হলো তরলমানুষ বিধায় মানুষ হয়ে মানুষ মৃগয়া করাই সাধকের প্রকৃত সাধনা। যেমন- মরমীকবি জালাল লিখেছেন-
“বাঘের ডাকে অন্তর কাঁপে মধুপুরের সে ঘরে,
কে যাবি শিকারে মানুষ কে যাবি শিকারে।
১.বাঘিনীর নাকটি বোঁচা
কেউ তারে দিওনা খোঁচা,
বাঘিনীর কোমর উঁচা
চায় সে আড়ে আড়ে,
যে শিকারী গিয়াছিল বাঘ ধরিবারে,
কত শিকারী ধরে খেল গুলি বন্দুক সহকারে।
২.শিকারীরা নিশিকালে
নীরবে যাও জঙ্গলে,
নিশানাটা ঠিক করিয়া বসে রও আড়ালে,
এমন জোরে ছাড়ো গুলি
যেন এক গুলিতেই মরে,
ধন্যরে শিকারী বেটা ধন্য আমি বলি তারে।
৩.শাহজালাল দরবেশ বলে
যাবি যদি বাঘ জঙ্গলে,
ভাবের বন্দুক প্রেমের গুলি হাতে নাওরে তুলে,
পঞ্চস্থানে পঞ্চগুলি যে লাগাতে পারে,
বাঘের সঙ্গে করলে পিরিত
এক গুলিতে ঢলে পড়ে।”
আমাদের মানবদেহের মধ্যে সাঁই কখনো বায়বীয় মানুষ আবার কখনো তরলমানুষরূপে বিরাজ করেন। বায়বীয় মানুষ ও তরলমানুষরূপে বিরাজিত সাঁইয়ের দর্শনলাভ করাই সাধকের একমাত্র লক্ষ্য। সাঁইয়ের দর্শনলাভকে কেন্দ্র করেই শাস্ত্রীয় মতানুসারিগণের এতসব শাস্ত্রীয়সংস্কার। পূজা, উপোস ও ধ্যানসহ সব কায়িক ও মানসিক উপাসনার মূল হলো সাঁইদর্শন। তিনি অন্যত্র লিখেছেন- “সাঁই আমার কখন খেলে কোন খেলা, জীবের কী সাধ্য আছে, গণে পড়ে তাই বলা।” কারণ সাঁই কখনো বায়বীয় মানুষরূপে আবার কখনো তরলমানুষরূপে আবার কখনো জীবদেহ ধারণ করে কঠিনমানুষরূপে এ নিখিল ধামে বিরাজ করছেন। তিনি কখন কোনরূপ ধারণ করেন তা সূক্ষ্মজ্ঞানী মহান মনীষীগণ ব্যতীত সাধারণ মানুষ জানতে ও বুঝতে পারেন না। আবার সাঁইদর্শনের জন্য চেষ্টাসাধনা না করে অলস হয়ে বসে থাকে, এরূপ মনের উদ্দেশ্যে তিনি দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন- “মন সহজে কী সহি হবা, গাদার ‘পর মুগর পড়লে, সে দিনেগা টের পাবা।” আমাদের পালনকর্তা সাঁইয়ের দর্শনের জন্য তিনি বর্ণনা করেছেন- “ধরো চোর হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতে, সে কিরে সামান্য চোরা, ধরবি কোণা কানছিতে।”
লালন লৌকিকা
বাস্তব-অবাস্তর ও রূপক-ব্যাপকের হ্রাস-বৃদ্ধিসহ লালনসাঁইজির প্রয়াণপূর্ব ও প্রয়াণোত্তর আলোচনা ও সমালোচনার দ্বারা জনসাধারণের মুখে মুখে যে সত্তার অস্তিত্বলাভ করেছে তাকে লালন লৌকিকা বলে।
নিচে লালনসাঁইজির কয়েকটি লৌকিকা তুলে ধরা হলো-
জন্মলৌকিকা
মহাত্মা লালনসাঁইজি গত ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতের নদীয়া অঞ্চলের ভাড়রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল শ্রী মাধবকর এবং মাতার নাম ছিল পদ্মাবতী। তাঁর কালন ও রঞ্জন নামে দু’টি ভাই এবং ললিতা নামে এক বোন ছিলেন। কালন বড়, রঞ্জন মেঝ, ললিতা সেঝ এবং আমাদের লালনসাঁইজি ছিলেন সবার ছোট। ছোটবেলায় বসন্তরোগে সবাই মারা যায়। দৈবাৎ লালনসাঁইজি একাই বেঁচে ছিলেন। একমাত্র সন্তান হওয়াই পিতা-মাতার অত্যন্ত আদরের সন্তান ছিলেন আমাদের লালন সাঁইজি। শৈশবকালে তিনি পিতৃহারা হন। অতঃপর মাতার দ্বারা লালিতপালিত হতে থাকেন। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক কোন প্রকার শিক্ষাগ্রহণ করতে পারেননি। তিনি ছোটবেলা মাঠে মাঠে গরু ছাগল চরাতেন। বিভিন্ন সাধুসঙ্গের সাথে তীর্থে তীর্থে ঘুরে বেড়াতেন। কোন এক গুরুত্বপূর্ণ তীর্থভ্রমণ শেষে গৃহে প্রত্যাবর্তনকালে তিনিও বসন্তরোগে আক্রান্ত হন। এ রোগটি তখন অত্যন্ত মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ বলে পরিচিত ছিল বিধায় লালনসাঁইজি বসন্তরোগে আক্রান্ত দেখে মাঝিরা তাকে নদীর জলে ফেলে দিয়ে আত্মরক্ষা করেন। অবশেষে তিনি কালীগঙ্গা নদীতে সংজ্ঞাহীনভাবে ভাসতে ভাসতে তীরস্থ হলে, কোন এক রমণী জলকে এসে তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় পেয়ে গৃহে নিয়ে যান। রমণী দম্পতি নিঃসন্তান হওয়ায় তারা লালন সাঁইজিকে সুস্থ করে তোলেন এবং পুত্রস্নেহে লালনপালন করেন।
অতঃপর যৌবনে তিনি ভেদবিদ্যা বা ভেদজ্ঞান, পরাজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞান বা আধ্যাত্মিকবিদ্যা অর্জনের জন্য মহাত্মা সিরাজ সাঁইজির নিকট শিষ্যত্বপদ গ্রহণ করেন। অতঃপর জ্ঞানগুরু সিরাজ সাঁইজির প্রয়াণ হলে, তিনি বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া অঞ্চলের ছেউড়িয়া গ্রামে এসে ক্ষুদ্র আধ্যাত্মিক আশ্রম নির্মাণ করেন। এ আশ্রমে বসেই তিনি রূপক সাহিত্যের প্রচার ও প্রসার করতে থাকেন। যতসম্ভব জানা যায় তিনি সহস্র (১,০০০)টি মরমীগীতি বা আধ্যাত্মিকতত্ত্ববাণী রচনা করেন। যা আজ আমাদের নিকট ‘লালন’ নামে পরিচিত। তাঁর জীবনে বিবাহের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে তাঁর একজন সাধনসঙ্গিনী ছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর ঔরসজাত সন্তানাদির কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। লালন সাঁইজি ১১৬ বছর বয়সে গত ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে আপন আশ্রমেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া অঞ্জলের ছেউড়িয়া গ্রামেই এ মহান বাঙালী মহাপুরুষের সমাধি সৌধটি অবস্থিত। প্রতি বঙ্গাব্দের প্রথম কার্তিক ও দোলপূর্ণিমায় তাঁর আশ্রমে বিশেষ দু’টি বাৎসরিক সাধুসম্মেলন হয়।
কমলা লৌকিকা
একদিন সিরাজ সাঁইজি আশ্রমে ছিলেন না, এমন সময় আসনে ৩টি কমলা এলো। সিরাজ সাঁইজির স্ত্রী লালনকে বললেন- “লালন তুমি একটা কমলা খাও, আমাকে একটা দাও এবং তোমার বাবাজির জন্য একটা রেখে দাও।” মাতাজির এরূপ আদেশ অমান্য করে লালন তিনটি কমলা একত্রে খেয়ে ফেললেন। সিরাজ সাঁইজি বাটীতে প্রবেশ করলে মাতাজি ঘটনাটি বাবাজিকে জানালেন। অতঃপর লালন মাতাজিকে বললেন- “মা কমলার বিচিগুলো কোথাও ফেলেছেন?” মাতাজি যে স্থানে বিচিগুলো ফেলেছিলেন সেখান হতে লালন একটি বিচি তুলে এনে উঠানের মধ্যখানে রোপণ করলেন। সিরাজ সাঁইজি হাতমুখ ধুয়ে এসে আসনে বসবার পূর্বেই, উক্ত বিচি হতে গাছ বের হলো, গাছ হতে ফুল বের হলো, ফুল হতে ফল বের হয়ে পেকে গেল। তিনটি কমলা ছিঁড়ে এনে লালন মাতাজিকে দিলেন। লালনের এ কা- দেখে মাতাজি অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেলেন। লালন বললেন- “মা! বিস্মিত হবেন না- গাছে আরো ৩৬০টি কমলা রয়েছে।” লালনের কা- দেখে সিরাজ সাঁইজি বললেন- “এত সহজে চমৎকার প্রদান করা কোন বুদ্ধিমান সাধকের উচিৎ না।”
দই লৌকিকা
একদিন আসনে কিছু দই এলে লালন সব দই খেয়ে ফেললেন। আসনে কথা উঠল “শিষ্য খেলে গুরুর খাওয়া হয়”। লালনও বললেন- “হ্যাঁ শিষ্য খেলে গুরুর খাওয়া হয়।” সিরাজ সাঁইজি বললেন- কেমন করে? লালন বললেন- “আপনার গলার মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে সদ্য ভক্ষণকৃত খাদ্য উদ্গীরণ করে দেখুন।” সত্য সত্যই সিরাজ সাঁইজি আপন গলার মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে খাদ্যাদি উদ্গীরণ করে দেখলেন সদ্য ভক্ষণকৃত দই। তিনি অবাক হলেন, মনেমনে বলতে থাকলেন- “এ দই তো আমি খাইনি, দই খেয়েছে লালন।” ফলে তিনি স্বীকার করলেন “শিষ্য খেলে গুরুর খাওয়া হয়”।
শিষ্য কাণ্ডারী লৌকিকা
একদিন ওপার গিয়ে গাঁওয়াল করবে বলে সিরাজ সাঁইজি লালনকে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন- নদীর ঘাটে গিয়ে উপস্থিত কোন নৌকা না পেয়ে লালন নৌকা অন্বেষণে বের হলেন- অবশেষে প্রায় ১২ বছর ত্যক্ত থাকা একটি নৌকা দেখতে পেয়ে লালন অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে গুরুদেবকে দেখিয়ে বললেন- “বাবা ঐ পতিত তরিটি বেয়ে পার হওয়াই উত্তম হবে। তা ভিন্ন আজ হয়ত কোন নৌকা পাওয়া যাবে না।” গুরুদেব বললেন- “চরাটহীন ভোগলাতলী শুকনায় ঠেলে যৌবন খেলি” গুরুদেবের এরূপ কথা শুনে লালন বুঝতে পারলেন যে, এ তরী গুরু বাইতে পারবেন না, অবশেষে তা-ই হলো। উক্ত নৌকায় উঠে গুরু বৈঠা মারলে ক্রমেক্রমে জল উঠে নৌকা ডুবতে আরম্ভ করে কিন্তু লালন বৈঠা মারলে নৌকার জল শুকাতে থাকে এবং নৌকাও দ্রুত চলতে থাকে। অবশেষে গুরু বৈঠা মারা ক্ষান্ত করলে লালন একাই বিশাল নদী অতিক্রম করে গুরুর গাঁওয়াল করার ব্যবস্থা করে দিলেন।
লালন দৈবিকা
বৈক্তিকসদস্যের মধ্য একটি সদস্য হলো লালন বা লালনপালনকর্তা। মহান মরমীকবি লালনসাঁইজি যেহেতু এ ছদ্মনামটি গ্রহণ করেই আত্মপ্রকাশ করেছেন বিধায় লালন নামক এ ব্যক্তি সদস্যাদিকে লালন দৈবিকা বলে।
দৈবিকা
মহামানবগণ সার্বজনীনতা ও সর্ব বিরাজমানতা অর্জনের লক্ষ্যে বৈক্তিকসদস্যের মধ্য হতে যে কোন একটির যে রূপকনামটি ছদ্মনামরূপে গ্রহণ করে আত্মপ্রকাশ করে থাকেন তাকে দৈবিকা বলে। যেমন- বলন, লালন, বুদ্ধ, মুহাম্মদ ইত্যাদি।
যে কোন দৈবিকা বা প্রতীতি সব সময় ১.মানবিক ও ২.দৈবিক- এ দু’টি চরিত্র বহণ করে বিধায় দৈবিকা বা প্রতীতিদের জীবনীগ্রন্থাদি পড়ার সময় ঘটনাদি কখনো লৌকিক ও কখনো অলৌকিক বলে মনে হয়। মহাত্মা লালনসাঁইজি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী মরমীকবি ও বাঙালী মহাপুরুষ। কিন্তু আত্মদর্শনে তিনি হলেন- সর্ব জীবের জঠরে অবস্থিত ও গর্ভস্থ ভ্রূণ লালন পালনকারী শ্রেষ্ঠ দেবতা। তিনিই ফুলের জঠরে অবস্থান করেন এবং মৌমাছি তাকেই আহরণ করে চাকে সঞ্চয় করলে আমরা সে লালনকেই মধু বলি। তিনিই হলের জীবের আদিপালক বা আদিলালনপালনকর্তা। বিশ্বের প্রতিটি জীবের গর্ভাশয়ে তার বাস। কাঁইয়ের আদেশে বসিধের আগমনের পর যোগেশ্বরীর মহাযোগ দ্বারা ঊষা প্রহরে বা ঊষালগ্নে সাধকগণ লালনসাঁইজির সঙ্গে সাক্ষ্যাত করে থাকেন। মহাত্মা লালনসাঁইজি বিশ্বের অগনিত ভক্ত শিষ্যগণের সাথে দেখা করার জন্য প্রতিমাসেই একবার স্বর্গধাম হতে আমাদের এ মর্ত্যধামে অবতরন করে থাকেন। প্রকৃত লালন অনুসারিরা তাঁর সাথে প্রত্যক্ষ দর্শনলাভ করে মানবজীবন ধন্য করেন। বিশ্বের প্রতিটি জীবের অজ্ঞাতবাস বা অন্তঃবাসকাল বা গর্ভকালে লালনসাঁইজি জীবকুলকে লালনপালন করেন বলেই তাকে লালন নামে অভিহিত করা হয়। মহামানবগণের বিভিন্ন সত্তাদির মধ্যে প্রতীতি বা দৈবিকাই শিষ্য ভক্তদের জন্য একমাত্র উপাস্য। সাধনরাজ্যে একমাত্র দৈবিকা ভিন্ন ব্যক্তি-সত্তা ও লৌকিকার তেমন কোন গুরুত্ব নেই। দীক্ষাগুরু ব্যতীত কেউই স্বস্ব উপাস্যকে ঢুঁড়ে বের করতে পারেন না। কী সাধনবলে মানুষের সৃষ্টিকর্তা কাঁই ও লালনকর্তা সাঁইয়ের দর্শনলাভ করা যায়, তা বের করতে অনেকেই পারেন না। লৌকিকাদি ভালোভাবে জানা ও পরাবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যাকে ভালোভাবে জানা ও বুঝার জন্যই প্রতিটি মানুুষের আধ্যাত্মিক দীক্ষাগুরু একান্ত প্রয়োজন।
রূপকলালন
নিজের বাস্তব-সত্তাকে আড়াল করে নিজের সম্পর্কে কিছু বলার জন্য লালনসাঁইজি ‘লালন’ উপনামরূপ যে সত্তা সৃষ্টি করেছেন তাকে রূপকলালন বলে। যেমন- জীবজল হতে ‘সাঁই’। এখানে ‘সাঁই’- জীবজল পরিভাষাটির একটি রূপকসদস্য অর্থাৎ জীবজলের রূপকসদস্য হলো ‘সাঁই’।
রূপক পরিভাষা
কোন বাস্তব-সত্তাকে আড়াল করে তার সম্পর্কে কিছু বলার জন্য মহান রূপকারগণ যে উপমান পরিভাষা সৃষ্টি করেন তাকে রূপক পরিভাষা বলে। যেমন- শিশ্ন হতে ‘খুঁটি’। এখানে ‘খুঁটি’ শিশ্নের একটি রূপক পরিভাষা বিশেষ। অর্থাৎ শিশ্নের রূপকসদস্য হলো ‘খুঁটি’। যেমন- “সবেমাত্র একটি খুঁটি, খুঁটির গোড়ায় নাইকো মাটি, কিসে ঘর রবে খাঁটি, ঝড়ি তুফান এলে পরে। ধন্যধন্য বলি তারে, বেঁধেছে এমনি ঘর, শূন্যের ওপর পোস্তা করে” (লালন)
ব্যাপক-সত্তা
কোন বাস্তব-সত্তাকে অধিক আড়াল বা আরো ব্যাপক আড়াল করে তার সম্পর্কে কিছু বলার জন্য মহান রূপকারগণ উপমানের উপমান পদরূপে যে সব ব্যাপক পরিভাষাদি সৃষ্টি করেন তাকে ব্যাপক-সত্তা বলে। যেমন- পালনকর্তা > সাঁই > গোরা > গৌরাঙ্গ। এখানে ‘পালনকর্তা’ পরিভাষাটির রূপকসদস্য “সাঁই” ও ব্যাপকসদস্য ‘গোরা’ ও ‘গৌরাঙ্গ’ ইত্যাদি।
সারাবিশ্বের লালন পালনকর্তাই লালন বিধায় ‘লালন’ নামটির আগে ও পরে যত পদবিই সংস্থাপন করা হোক না কেন তবুও ন্যূন হবে বৈকি। কিন্তু কোন মূর্তমান বা দেহধারী মানুষকে সাঁইজি বলতে পারি না। যদি কোন সাধক নিরলস সাধন প্রক্রিয়া দ্বারা মানবদেহের সাঁই-সত্তার উদ্ঘাটন করে, তার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দর্শনলাভ করতে পারেন তবে তাকে সাঁইজি বলা যায়। কিন্তু শুধু সাঁই বলা কখনই উচিৎ নয়। যেমন- লালনসাঁই ও সিরাজসাঁই এরূপ বলা সঠিক হবে না বরং বলতে হবে লালনসাঁইজি ও সিরাজসাঁইজি। অর্থাৎ বাংলাভাষার ‘সাঁই’ নামটি একমাত্র সারাবিশ্বের লালনপালনকারী সত্তার জন্যই নির্দিষ্ট। এ নামটি অবিকলরূপে ব্যবহার করা কোন ব্যক্তির জন্য সিদ্ধ নয়। যেমন- মানুষকে আল্লাম, আল্লামা বা অলিউল্লাহ বলা যায় কিন্তু সরাসরি আল্লাহ (ﺍﻠﻟﻪ) বলা সিদ্ধ নয়।
বাস্তব-অবাস্তর ও রূপক-ব্যাপকের হ্রাস-বৃদ্ধিসহ লালনসাঁইজির প্রয়াণপূর্ব ও প্রয়াণোত্তর আলোচনা ও সমালোচনার দ্বারা জনসাধারণের মুখে মুখে যে সত্তার অস্তিত্বলাভ করেছে তাকে লালন লৌকিকা বলে।
নিচে লালনসাঁইজির কয়েকটি লৌকিকা তুলে ধরা হলো-
জন্মলৌকিকা
মহাত্মা লালনসাঁইজি গত ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতের নদীয়া অঞ্চলের ভাড়রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল শ্রী মাধবকর এবং মাতার নাম ছিল পদ্মাবতী। তাঁর কালন ও রঞ্জন নামে দু’টি ভাই এবং ললিতা নামে এক বোন ছিলেন। কালন বড়, রঞ্জন মেঝ, ললিতা সেঝ এবং আমাদের লালনসাঁইজি ছিলেন সবার ছোট। ছোটবেলায় বসন্তরোগে সবাই মারা যায়। দৈবাৎ লালনসাঁইজি একাই বেঁচে ছিলেন। একমাত্র সন্তান হওয়াই পিতা-মাতার অত্যন্ত আদরের সন্তান ছিলেন আমাদের লালন সাঁইজি। শৈশবকালে তিনি পিতৃহারা হন। অতঃপর মাতার দ্বারা লালিতপালিত হতে থাকেন। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক কোন প্রকার শিক্ষাগ্রহণ করতে পারেননি। তিনি ছোটবেলা মাঠে মাঠে গরু ছাগল চরাতেন। বিভিন্ন সাধুসঙ্গের সাথে তীর্থে তীর্থে ঘুরে বেড়াতেন। কোন এক গুরুত্বপূর্ণ তীর্থভ্রমণ শেষে গৃহে প্রত্যাবর্তনকালে তিনিও বসন্তরোগে আক্রান্ত হন। এ রোগটি তখন অত্যন্ত মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ বলে পরিচিত ছিল বিধায় লালনসাঁইজি বসন্তরোগে আক্রান্ত দেখে মাঝিরা তাকে নদীর জলে ফেলে দিয়ে আত্মরক্ষা করেন। অবশেষে তিনি কালীগঙ্গা নদীতে সংজ্ঞাহীনভাবে ভাসতে ভাসতে তীরস্থ হলে, কোন এক রমণী জলকে এসে তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় পেয়ে গৃহে নিয়ে যান। রমণী দম্পতি নিঃসন্তান হওয়ায় তারা লালন সাঁইজিকে সুস্থ করে তোলেন এবং পুত্রস্নেহে লালনপালন করেন।
অতঃপর যৌবনে তিনি ভেদবিদ্যা বা ভেদজ্ঞান, পরাজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞান বা আধ্যাত্মিকবিদ্যা অর্জনের জন্য মহাত্মা সিরাজ সাঁইজির নিকট শিষ্যত্বপদ গ্রহণ করেন। অতঃপর জ্ঞানগুরু সিরাজ সাঁইজির প্রয়াণ হলে, তিনি বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া অঞ্চলের ছেউড়িয়া গ্রামে এসে ক্ষুদ্র আধ্যাত্মিক আশ্রম নির্মাণ করেন। এ আশ্রমে বসেই তিনি রূপক সাহিত্যের প্রচার ও প্রসার করতে থাকেন। যতসম্ভব জানা যায় তিনি সহস্র (১,০০০)টি মরমীগীতি বা আধ্যাত্মিকতত্ত্ববাণী রচনা করেন। যা আজ আমাদের নিকট ‘লালন’ নামে পরিচিত। তাঁর জীবনে বিবাহের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে তাঁর একজন সাধনসঙ্গিনী ছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর ঔরসজাত সন্তানাদির কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। লালন সাঁইজি ১১৬ বছর বয়সে গত ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে আপন আশ্রমেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া অঞ্জলের ছেউড়িয়া গ্রামেই এ মহান বাঙালী মহাপুরুষের সমাধি সৌধটি অবস্থিত। প্রতি বঙ্গাব্দের প্রথম কার্তিক ও দোলপূর্ণিমায় তাঁর আশ্রমে বিশেষ দু’টি বাৎসরিক সাধুসম্মেলন হয়।
কমলা লৌকিকা
একদিন সিরাজ সাঁইজি আশ্রমে ছিলেন না, এমন সময় আসনে ৩টি কমলা এলো। সিরাজ সাঁইজির স্ত্রী লালনকে বললেন- “লালন তুমি একটা কমলা খাও, আমাকে একটা দাও এবং তোমার বাবাজির জন্য একটা রেখে দাও।” মাতাজির এরূপ আদেশ অমান্য করে লালন তিনটি কমলা একত্রে খেয়ে ফেললেন। সিরাজ সাঁইজি বাটীতে প্রবেশ করলে মাতাজি ঘটনাটি বাবাজিকে জানালেন। অতঃপর লালন মাতাজিকে বললেন- “মা কমলার বিচিগুলো কোথাও ফেলেছেন?” মাতাজি যে স্থানে বিচিগুলো ফেলেছিলেন সেখান হতে লালন একটি বিচি তুলে এনে উঠানের মধ্যখানে রোপণ করলেন। সিরাজ সাঁইজি হাতমুখ ধুয়ে এসে আসনে বসবার পূর্বেই, উক্ত বিচি হতে গাছ বের হলো, গাছ হতে ফুল বের হলো, ফুল হতে ফল বের হয়ে পেকে গেল। তিনটি কমলা ছিঁড়ে এনে লালন মাতাজিকে দিলেন। লালনের এ কা- দেখে মাতাজি অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেলেন। লালন বললেন- “মা! বিস্মিত হবেন না- গাছে আরো ৩৬০টি কমলা রয়েছে।” লালনের কা- দেখে সিরাজ সাঁইজি বললেন- “এত সহজে চমৎকার প্রদান করা কোন বুদ্ধিমান সাধকের উচিৎ না।”
দই লৌকিকা
একদিন আসনে কিছু দই এলে লালন সব দই খেয়ে ফেললেন। আসনে কথা উঠল “শিষ্য খেলে গুরুর খাওয়া হয়”। লালনও বললেন- “হ্যাঁ শিষ্য খেলে গুরুর খাওয়া হয়।” সিরাজ সাঁইজি বললেন- কেমন করে? লালন বললেন- “আপনার গলার মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে সদ্য ভক্ষণকৃত খাদ্য উদ্গীরণ করে দেখুন।” সত্য সত্যই সিরাজ সাঁইজি আপন গলার মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে খাদ্যাদি উদ্গীরণ করে দেখলেন সদ্য ভক্ষণকৃত দই। তিনি অবাক হলেন, মনেমনে বলতে থাকলেন- “এ দই তো আমি খাইনি, দই খেয়েছে লালন।” ফলে তিনি স্বীকার করলেন “শিষ্য খেলে গুরুর খাওয়া হয়”।
শিষ্য কাণ্ডারী লৌকিকা
একদিন ওপার গিয়ে গাঁওয়াল করবে বলে সিরাজ সাঁইজি লালনকে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন- নদীর ঘাটে গিয়ে উপস্থিত কোন নৌকা না পেয়ে লালন নৌকা অন্বেষণে বের হলেন- অবশেষে প্রায় ১২ বছর ত্যক্ত থাকা একটি নৌকা দেখতে পেয়ে লালন অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে গুরুদেবকে দেখিয়ে বললেন- “বাবা ঐ পতিত তরিটি বেয়ে পার হওয়াই উত্তম হবে। তা ভিন্ন আজ হয়ত কোন নৌকা পাওয়া যাবে না।” গুরুদেব বললেন- “চরাটহীন ভোগলাতলী শুকনায় ঠেলে যৌবন খেলি” গুরুদেবের এরূপ কথা শুনে লালন বুঝতে পারলেন যে, এ তরী গুরু বাইতে পারবেন না, অবশেষে তা-ই হলো। উক্ত নৌকায় উঠে গুরু বৈঠা মারলে ক্রমেক্রমে জল উঠে নৌকা ডুবতে আরম্ভ করে কিন্তু লালন বৈঠা মারলে নৌকার জল শুকাতে থাকে এবং নৌকাও দ্রুত চলতে থাকে। অবশেষে গুরু বৈঠা মারা ক্ষান্ত করলে লালন একাই বিশাল নদী অতিক্রম করে গুরুর গাঁওয়াল করার ব্যবস্থা করে দিলেন।
লালন দৈবিকা
বৈক্তিকসদস্যের মধ্য একটি সদস্য হলো লালন বা লালনপালনকর্তা। মহান মরমীকবি লালনসাঁইজি যেহেতু এ ছদ্মনামটি গ্রহণ করেই আত্মপ্রকাশ করেছেন বিধায় লালন নামক এ ব্যক্তি সদস্যাদিকে লালন দৈবিকা বলে।
দৈবিকা
মহামানবগণ সার্বজনীনতা ও সর্ব বিরাজমানতা অর্জনের লক্ষ্যে বৈক্তিকসদস্যের মধ্য হতে যে কোন একটির যে রূপকনামটি ছদ্মনামরূপে গ্রহণ করে আত্মপ্রকাশ করে থাকেন তাকে দৈবিকা বলে। যেমন- বলন, লালন, বুদ্ধ, মুহাম্মদ ইত্যাদি।
যে কোন দৈবিকা বা প্রতীতি সব সময় ১.মানবিক ও ২.দৈবিক- এ দু’টি চরিত্র বহণ করে বিধায় দৈবিকা বা প্রতীতিদের জীবনীগ্রন্থাদি পড়ার সময় ঘটনাদি কখনো লৌকিক ও কখনো অলৌকিক বলে মনে হয়। মহাত্মা লালনসাঁইজি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী মরমীকবি ও বাঙালী মহাপুরুষ। কিন্তু আত্মদর্শনে তিনি হলেন- সর্ব জীবের জঠরে অবস্থিত ও গর্ভস্থ ভ্রূণ লালন পালনকারী শ্রেষ্ঠ দেবতা। তিনিই ফুলের জঠরে অবস্থান করেন এবং মৌমাছি তাকেই আহরণ করে চাকে সঞ্চয় করলে আমরা সে লালনকেই মধু বলি। তিনিই হলের জীবের আদিপালক বা আদিলালনপালনকর্তা। বিশ্বের প্রতিটি জীবের গর্ভাশয়ে তার বাস। কাঁইয়ের আদেশে বসিধের আগমনের পর যোগেশ্বরীর মহাযোগ দ্বারা ঊষা প্রহরে বা ঊষালগ্নে সাধকগণ লালনসাঁইজির সঙ্গে সাক্ষ্যাত করে থাকেন। মহাত্মা লালনসাঁইজি বিশ্বের অগনিত ভক্ত শিষ্যগণের সাথে দেখা করার জন্য প্রতিমাসেই একবার স্বর্গধাম হতে আমাদের এ মর্ত্যধামে অবতরন করে থাকেন। প্রকৃত লালন অনুসারিরা তাঁর সাথে প্রত্যক্ষ দর্শনলাভ করে মানবজীবন ধন্য করেন। বিশ্বের প্রতিটি জীবের অজ্ঞাতবাস বা অন্তঃবাসকাল বা গর্ভকালে লালনসাঁইজি জীবকুলকে লালনপালন করেন বলেই তাকে লালন নামে অভিহিত করা হয়। মহামানবগণের বিভিন্ন সত্তাদির মধ্যে প্রতীতি বা দৈবিকাই শিষ্য ভক্তদের জন্য একমাত্র উপাস্য। সাধনরাজ্যে একমাত্র দৈবিকা ভিন্ন ব্যক্তি-সত্তা ও লৌকিকার তেমন কোন গুরুত্ব নেই। দীক্ষাগুরু ব্যতীত কেউই স্বস্ব উপাস্যকে ঢুঁড়ে বের করতে পারেন না। কী সাধনবলে মানুষের সৃষ্টিকর্তা কাঁই ও লালনকর্তা সাঁইয়ের দর্শনলাভ করা যায়, তা বের করতে অনেকেই পারেন না। লৌকিকাদি ভালোভাবে জানা ও পরাবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যাকে ভালোভাবে জানা ও বুঝার জন্যই প্রতিটি মানুুষের আধ্যাত্মিক দীক্ষাগুরু একান্ত প্রয়োজন।
রূপকলালন
নিজের বাস্তব-সত্তাকে আড়াল করে নিজের সম্পর্কে কিছু বলার জন্য লালনসাঁইজি ‘লালন’ উপনামরূপ যে সত্তা সৃষ্টি করেছেন তাকে রূপকলালন বলে। যেমন- জীবজল হতে ‘সাঁই’। এখানে ‘সাঁই’- জীবজল পরিভাষাটির একটি রূপকসদস্য অর্থাৎ জীবজলের রূপকসদস্য হলো ‘সাঁই’।
রূপক পরিভাষা
কোন বাস্তব-সত্তাকে আড়াল করে তার সম্পর্কে কিছু বলার জন্য মহান রূপকারগণ যে উপমান পরিভাষা সৃষ্টি করেন তাকে রূপক পরিভাষা বলে। যেমন- শিশ্ন হতে ‘খুঁটি’। এখানে ‘খুঁটি’ শিশ্নের একটি রূপক পরিভাষা বিশেষ। অর্থাৎ শিশ্নের রূপকসদস্য হলো ‘খুঁটি’। যেমন- “সবেমাত্র একটি খুঁটি, খুঁটির গোড়ায় নাইকো মাটি, কিসে ঘর রবে খাঁটি, ঝড়ি তুফান এলে পরে। ধন্যধন্য বলি তারে, বেঁধেছে এমনি ঘর, শূন্যের ওপর পোস্তা করে” (লালন)
ব্যাপক-সত্তা
কোন বাস্তব-সত্তাকে অধিক আড়াল বা আরো ব্যাপক আড়াল করে তার সম্পর্কে কিছু বলার জন্য মহান রূপকারগণ উপমানের উপমান পদরূপে যে সব ব্যাপক পরিভাষাদি সৃষ্টি করেন তাকে ব্যাপক-সত্তা বলে। যেমন- পালনকর্তা > সাঁই > গোরা > গৌরাঙ্গ। এখানে ‘পালনকর্তা’ পরিভাষাটির রূপকসদস্য “সাঁই” ও ব্যাপকসদস্য ‘গোরা’ ও ‘গৌরাঙ্গ’ ইত্যাদি।
সারাবিশ্বের লালন পালনকর্তাই লালন বিধায় ‘লালন’ নামটির আগে ও পরে যত পদবিই সংস্থাপন করা হোক না কেন তবুও ন্যূন হবে বৈকি। কিন্তু কোন মূর্তমান বা দেহধারী মানুষকে সাঁইজি বলতে পারি না। যদি কোন সাধক নিরলস সাধন প্রক্রিয়া দ্বারা মানবদেহের সাঁই-সত্তার উদ্ঘাটন করে, তার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দর্শনলাভ করতে পারেন তবে তাকে সাঁইজি বলা যায়। কিন্তু শুধু সাঁই বলা কখনই উচিৎ নয়। যেমন- লালনসাঁই ও সিরাজসাঁই এরূপ বলা সঠিক হবে না বরং বলতে হবে লালনসাঁইজি ও সিরাজসাঁইজি। অর্থাৎ বাংলাভাষার ‘সাঁই’ নামটি একমাত্র সারাবিশ্বের লালনপালনকারী সত্তার জন্যই নির্দিষ্ট। এ নামটি অবিকলরূপে ব্যবহার করা কোন ব্যক্তির জন্য সিদ্ধ নয়। যেমন- মানুষকে আল্লাম, আল্লামা বা অলিউল্লাহ বলা যায় কিন্তু সরাসরি আল্লাহ (ﺍﻠﻟﻪ) বলা সিদ্ধ নয়।
‘লালন’
ছদ্মনাম গ্রহণের
তাত্ত্বিকতা
রূপক সাহিত্যের ষড়াশ্রয়ে প্রবেশ করার পর বিশ্বের কোন সাধু সন্ন্যাসীই পিতা-মাতার রাখা সামাজিক নামটি ব্যবহার করতে পারেন না। কারণ পিতা-মাতার রাখা নামটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিশ্বজনীন কিংবা সার্বজনীন হয় না কিংবা উক্ত নামটি বিশ্বের সব মানুষের বৈক্তিকসদস্যের মধ্যে ঢুঁড়ে পাওয়া যায় না বিধায় রূপকার বা যাজক বা সাধু সন্ন্যাসীগণ বৈক্তিকসদস্যের অসংখ্য দৈবিকা বা প্রতীতিগণের মধ্যে থেকে একটি সুন্দর ও অনুপম নাম ছদ্মনামরূপে গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি সে নামেই আত্মপ্রকাশ করেন। যাজকগণের ছদ্মনাম গ্রহণের সঙ্গেসঙ্গেই তাঁর জন্মদিবস জন্মস্থান বংশগোত্র কিংবা শিক্ষাগতযোগ্যতা সব কিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়। আবার নতুন করে তাঁর জন্মদিবস জন্মস্থান ও বংশগোত্র ইত্যাদি নিজেই রূপকার্থে নির্মাণ করেন বিধায় আধ্যাত্মিক মহামানবগণের জন্মদিবস জন্মস্থান ও বংশগোত্র ইত্যাদির কোন কিছুই সঠিকভাবে জানা যায় না। যা জানা যায় তার পুরোটাই রূপক এবং নির্মাণ সূত্রাদিও এক ও অভিন্ন বিধায় বাস্তবে অনুসন্ধান করেও দেখা যায়- শ্রীকৃষ্ণ, হযরত মুহাম্মদ ও বড়পিরের জন্মদিন এক ও অভিন্ন। ক্ষুদেবিশ্বরূপ আমাদের এ মানবদেহের বৈক্তিকসদদ্যের মধ্যে যত দৈবিকা বা প্রতীতি রয়েছে তার মধ্যে গর্ভাশয়ে ভ্রূণরূপ সন্তান লালন পালনের দায়িত্ব পালনকারী প্রতীতিই সর্বপ্রধান। তিনি দ্বিপস্থ প্রজাতির সব জীবের মধ্যেই বিরাজ করেন। তাই বলা যায় তিনি ভ্রূণ লালনপালন না করলে বিশ্বের কোন দ্বিপস্থ জীবের বংশবৃদ্ধিই সম্ভব হবে না। ।
জীবদেহে বিশ্বকর্মা লালন বা সাঁইয়ের অস্তিত্ব একমাত্র মানুষ ও মৌমাছিই প্রমাণ করতে পারে। মৌমাছি ফুলের গর্ভাশয় হতে মধুরূপ লালন বা বিশ্বকর্মারূপ সাঁইরস আহরণ করে এনে চাকে সঞ্চয় করে। তখন তাকে আমরা মধু বলে থাকি। তদ্রূপ সাধু সন্ন্যাসীগণ সাধনবলে মানবদেহে উৎপন্ন মস্তিষ্ক মেরুজল Cerebra Spinal Fluid বা জীবজল আহরণ করে আনলে তাকে আমরা ‘সাঁই’ বলে থাকি। বিশ্বকর্মা বিশ্বের সব জীবদেহকে সমানভাবে সুগঠন করে থাকেন। তিনিই বিশ্বের আদিলালনপালনকর্তা। বিশ্বের সর্ব প্রকার জীব গর্ভাশয়ে বা ডিমের ভিতরে সুষম বর্ধিত হওয়ার পর যথা সময়ে ভূমিষ্ঠ হয়। অতঃপর অন্তপালক পিতা-মাতা সন্তানের লালন পালনের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বিশ্বের প্রতিটি জীবের আদিলালনপালনকারী এ বিশ্বকর্মাই হলেন আমাদের আলোচ্য ‘লালন’। লালনাদির রচয়িতা ‘লালন’ তাঁর একটি ছদ্মনাম এবং ‘সাঁইজি’ তাঁর উপাধিমাত্র। বলা যায় যেমন মহাজ্ঞানী তেমনি অনুপম ছদ্মনাম। আমাদের লালনসাঁইজির আবির্ভাবের প্রায় বারোশত (১,২০০) বছর পূর্বে ত্রিশৃঙ্গ (কুরান. قُرَانُ) নামক মহাগ্রন্থটির নির্মাতাও এ একই উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। তবে তিনি আরবি ভাষাভাষী হওয়াই তাঁর ছদ্মনামটি হয় ‘মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ)’।
মুহাম্মদ [ﻤﺤﻤﺪ] (রূপ)বি অধিক প্রশংসিত, অত্যন্ত প্রশংসার পাত্র, কুরানীদের নামের পূর্বে ব্যবহৃত পরিভাষা (প্র) কুরানী মনীষীদের রূপকবর্ণনা মতে আরব্য বংশোদ্ভূত কুরানোক্ত মুহাম্মদ, আরবি ভাষার বিশ্ববিখ্যাত মহাগ্রন্থ কুরানের রচয়িতা (পরি) তরলমানুষ- যে এখনো মূর্তাকার ধারণ করেনি। মাতৃজঠরে ভ্রূণ লালনপালনের দায়িত্বপালনকারী সুমিষ্ট সুপেয় ও শ্বেতবর্ণের জীবজল বিশেষ (সংজ্ঞা) মাতৃজঠরে জীবের লালনপালনকারী রসকে পালনকর্তা বা অধিক প্রশংসার পাত্র বলা হয় (আপ্র) মানবদেহের সর্বশেষ অবতার। পালনকর্তা পরিবারের সদস্য বিশেষ, রূপক সাহিত্যের একটি দৈবিকা বা প্রতীতি (আবি)বি পালনকর্তা, ঈশ্বর, প্রভু, বিষ্ণু, বুদ্ধ, স্বামী, guardian, রব (আ.ﺮﺐ) (আভা)বি উপাস্য, নারায়ণ, নিধি, নিমাই, নিরঞ্জন, সুধা, সোম, স্বরূপ (আদৈ)বি খোদা (ফা.ﺨﺪﺍ), মাবুদ (আ.ﻤﻌﺑﻭﺪ), রাসুল (আ.ﺮﺴﻭﻝ) (আপ)বি আবেহায়াত (ফা.ﺁﺐﺤﻴﺎﺖ), কাওসার (আ.ﻜﻭﺛﺮ), ফুরাত (আ.ﻔﺭﺍﺖ) (ইপ)বি God, nectar, elixir (উপ)বি উপাস্য, পরমগুরু, গোঁসাই (রূ)বি সাঁই (দেত)বি পালনকর্তা {আ}
বিশ্বের মধ্যে বিশ্বকর্মা লালনই সর্বাধিক প্রশংসার যোগ্যপাত্র। স্বয়ং উপাস্য হওয়াই তিনি সর্বাধিক প্রশংসার যোগ্যপাত্র হওয়ার উপযুক্ত। মহাপ্রশংসার যোগ্যপাত্র আমাদের লালন পরিভাষাটির আরবিভাষার রূপকানুবাদ ‘মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ)’ এবং ইংরেজি ভাষায় রূপকানুবাদ God। লালন, বিষ্ণু, মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ) ও God এসব পরিভাষার প্রকৃত-সত্তা এক ও অভিন্ন। এ পরিভাষাটির রূপকসদস্য হলো আমাদের বাংলাভাষায় ‘সাঁই’। লালন (ছদ্মনাম), লালনাদির মধ্যে নিহিত লালন (সাঁই) ও লালনাদির রচয়িতা লালন (ব্যক্তি)। এগুলো সম্পূর্ণরূপে ভিন্নি ভিন্ন তিনটি সত্তা। যদিও সাধারণ মানুষ সহজে বিচার বিশ্লেষণ করে বের করতে না পেরে এ ত্রি-সত্তাকে এক সত্তা মনে করে প্রতিনিয়ত তর্ক বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছে।
(সংক্ষিপ্ত সংকলন)
তথ্যসূত্রঃ পবিত্র লালন
সংকলকঃ বলন কাঁইজি
রূপক সাহিত্যের ষড়াশ্রয়ে প্রবেশ করার পর বিশ্বের কোন সাধু সন্ন্যাসীই পিতা-মাতার রাখা সামাজিক নামটি ব্যবহার করতে পারেন না। কারণ পিতা-মাতার রাখা নামটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিশ্বজনীন কিংবা সার্বজনীন হয় না কিংবা উক্ত নামটি বিশ্বের সব মানুষের বৈক্তিকসদস্যের মধ্যে ঢুঁড়ে পাওয়া যায় না বিধায় রূপকার বা যাজক বা সাধু সন্ন্যাসীগণ বৈক্তিকসদস্যের অসংখ্য দৈবিকা বা প্রতীতিগণের মধ্যে থেকে একটি সুন্দর ও অনুপম নাম ছদ্মনামরূপে গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি সে নামেই আত্মপ্রকাশ করেন। যাজকগণের ছদ্মনাম গ্রহণের সঙ্গেসঙ্গেই তাঁর জন্মদিবস জন্মস্থান বংশগোত্র কিংবা শিক্ষাগতযোগ্যতা সব কিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়। আবার নতুন করে তাঁর জন্মদিবস জন্মস্থান ও বংশগোত্র ইত্যাদি নিজেই রূপকার্থে নির্মাণ করেন বিধায় আধ্যাত্মিক মহামানবগণের জন্মদিবস জন্মস্থান ও বংশগোত্র ইত্যাদির কোন কিছুই সঠিকভাবে জানা যায় না। যা জানা যায় তার পুরোটাই রূপক এবং নির্মাণ সূত্রাদিও এক ও অভিন্ন বিধায় বাস্তবে অনুসন্ধান করেও দেখা যায়- শ্রীকৃষ্ণ, হযরত মুহাম্মদ ও বড়পিরের জন্মদিন এক ও অভিন্ন। ক্ষুদেবিশ্বরূপ আমাদের এ মানবদেহের বৈক্তিকসদদ্যের মধ্যে যত দৈবিকা বা প্রতীতি রয়েছে তার মধ্যে গর্ভাশয়ে ভ্রূণরূপ সন্তান লালন পালনের দায়িত্ব পালনকারী প্রতীতিই সর্বপ্রধান। তিনি দ্বিপস্থ প্রজাতির সব জীবের মধ্যেই বিরাজ করেন। তাই বলা যায় তিনি ভ্রূণ লালনপালন না করলে বিশ্বের কোন দ্বিপস্থ জীবের বংশবৃদ্ধিই সম্ভব হবে না। ।
জীবদেহে বিশ্বকর্মা লালন বা সাঁইয়ের অস্তিত্ব একমাত্র মানুষ ও মৌমাছিই প্রমাণ করতে পারে। মৌমাছি ফুলের গর্ভাশয় হতে মধুরূপ লালন বা বিশ্বকর্মারূপ সাঁইরস আহরণ করে এনে চাকে সঞ্চয় করে। তখন তাকে আমরা মধু বলে থাকি। তদ্রূপ সাধু সন্ন্যাসীগণ সাধনবলে মানবদেহে উৎপন্ন মস্তিষ্ক মেরুজল Cerebra Spinal Fluid বা জীবজল আহরণ করে আনলে তাকে আমরা ‘সাঁই’ বলে থাকি। বিশ্বকর্মা বিশ্বের সব জীবদেহকে সমানভাবে সুগঠন করে থাকেন। তিনিই বিশ্বের আদিলালনপালনকর্তা। বিশ্বের সর্ব প্রকার জীব গর্ভাশয়ে বা ডিমের ভিতরে সুষম বর্ধিত হওয়ার পর যথা সময়ে ভূমিষ্ঠ হয়। অতঃপর অন্তপালক পিতা-মাতা সন্তানের লালন পালনের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বিশ্বের প্রতিটি জীবের আদিলালনপালনকারী এ বিশ্বকর্মাই হলেন আমাদের আলোচ্য ‘লালন’। লালনাদির রচয়িতা ‘লালন’ তাঁর একটি ছদ্মনাম এবং ‘সাঁইজি’ তাঁর উপাধিমাত্র। বলা যায় যেমন মহাজ্ঞানী তেমনি অনুপম ছদ্মনাম। আমাদের লালনসাঁইজির আবির্ভাবের প্রায় বারোশত (১,২০০) বছর পূর্বে ত্রিশৃঙ্গ (কুরান. قُرَانُ) নামক মহাগ্রন্থটির নির্মাতাও এ একই উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। তবে তিনি আরবি ভাষাভাষী হওয়াই তাঁর ছদ্মনামটি হয় ‘মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ)’।
মুহাম্মদ [ﻤﺤﻤﺪ] (রূপ)বি অধিক প্রশংসিত, অত্যন্ত প্রশংসার পাত্র, কুরানীদের নামের পূর্বে ব্যবহৃত পরিভাষা (প্র) কুরানী মনীষীদের রূপকবর্ণনা মতে আরব্য বংশোদ্ভূত কুরানোক্ত মুহাম্মদ, আরবি ভাষার বিশ্ববিখ্যাত মহাগ্রন্থ কুরানের রচয়িতা (পরি) তরলমানুষ- যে এখনো মূর্তাকার ধারণ করেনি। মাতৃজঠরে ভ্রূণ লালনপালনের দায়িত্বপালনকারী সুমিষ্ট সুপেয় ও শ্বেতবর্ণের জীবজল বিশেষ (সংজ্ঞা) মাতৃজঠরে জীবের লালনপালনকারী রসকে পালনকর্তা বা অধিক প্রশংসার পাত্র বলা হয় (আপ্র) মানবদেহের সর্বশেষ অবতার। পালনকর্তা পরিবারের সদস্য বিশেষ, রূপক সাহিত্যের একটি দৈবিকা বা প্রতীতি (আবি)বি পালনকর্তা, ঈশ্বর, প্রভু, বিষ্ণু, বুদ্ধ, স্বামী, guardian, রব (আ.ﺮﺐ) (আভা)বি উপাস্য, নারায়ণ, নিধি, নিমাই, নিরঞ্জন, সুধা, সোম, স্বরূপ (আদৈ)বি খোদা (ফা.ﺨﺪﺍ), মাবুদ (আ.ﻤﻌﺑﻭﺪ), রাসুল (আ.ﺮﺴﻭﻝ) (আপ)বি আবেহায়াত (ফা.ﺁﺐﺤﻴﺎﺖ), কাওসার (আ.ﻜﻭﺛﺮ), ফুরাত (আ.ﻔﺭﺍﺖ) (ইপ)বি God, nectar, elixir (উপ)বি উপাস্য, পরমগুরু, গোঁসাই (রূ)বি সাঁই (দেত)বি পালনকর্তা {আ}
বিশ্বের মধ্যে বিশ্বকর্মা লালনই সর্বাধিক প্রশংসার যোগ্যপাত্র। স্বয়ং উপাস্য হওয়াই তিনি সর্বাধিক প্রশংসার যোগ্যপাত্র হওয়ার উপযুক্ত। মহাপ্রশংসার যোগ্যপাত্র আমাদের লালন পরিভাষাটির আরবিভাষার রূপকানুবাদ ‘মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ)’ এবং ইংরেজি ভাষায় রূপকানুবাদ God। লালন, বিষ্ণু, মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ) ও God এসব পরিভাষার প্রকৃত-সত্তা এক ও অভিন্ন। এ পরিভাষাটির রূপকসদস্য হলো আমাদের বাংলাভাষায় ‘সাঁই’। লালন (ছদ্মনাম), লালনাদির মধ্যে নিহিত লালন (সাঁই) ও লালনাদির রচয়িতা লালন (ব্যক্তি)। এগুলো সম্পূর্ণরূপে ভিন্নি ভিন্ন তিনটি সত্তা। যদিও সাধারণ মানুষ সহজে বিচার বিশ্লেষণ করে বের করতে না পেরে এ ত্রি-সত্তাকে এক সত্তা মনে করে প্রতিনিয়ত তর্ক বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছে।
(সংক্ষিপ্ত সংকলন)
তথ্যসূত্রঃ পবিত্র লালন
সংকলকঃ বলন কাঁইজি
Thank you Mr. Raja
Mukherjee (Alipurduar) for Sharing this valuable content with me.
lalon fakir, lalon kakir biography, lalon fakir hisory, spiritual lalon, lalon geeti, lalon phakir, lalon phakir biography, lalon phakir history, lalon fokir, lalon fokir biography, lalon fokir history,
ReplyDeleteVery nice
ReplyDeleteThnx a Lot..........
ReplyDelete