আবির্ভাব
বাংলাভাষার এ মরমীকবি, মহান আধ্যাত্মিকজ্ঞান তাপস ও আত্মতাত্ত্বিক ১১৬ বছর আয়ুলাভ করেন। এ সূত্র হতে বলা যায় (১৮৯০-১১৬) তাঁর আবির্ভাব কাল ছিল ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দ।
বাংলাভাষার এ মরমীকবি, মহান আধ্যাত্মিকজ্ঞান তাপস ও আত্মতাত্ত্বিক ১১৬ বছর আয়ুলাভ করেন। এ সূত্র হতে বলা যায় (১৮৯০-১১৬) তাঁর আবির্ভাব কাল ছিল ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দ।
মহাপরিনির্বাণ
মহাত্মা লালনসাঁইজি ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর শুক্রবার প্রত্যুষে দেহধাম ত্যাগ করেন। বাংলাদেশের কুষ্টিয়া অঞ্চলের ছেউড়িয়া গ্রামে তার সমাধিসৌধ অবস্থিত।
বার্ষিক সাধুসম্মেলন
প্রতি বছর তাঁর আশ্রমে দু’টি সাধুসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১.প্রতি বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক ২.প্রতি বঙ্গাব্দের দোলপূর্ণিমা।
মহাত্মা লালনসাঁইজি ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর শুক্রবার প্রত্যুষে দেহধাম ত্যাগ করেন। বাংলাদেশের কুষ্টিয়া অঞ্চলের ছেউড়িয়া গ্রামে তার সমাধিসৌধ অবস্থিত।
বার্ষিক সাধুসম্মেলন
প্রতি বছর তাঁর আশ্রমে দু’টি সাধুসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১.প্রতি বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক ২.প্রতি বঙ্গাব্দের দোলপূর্ণিমা।
বাঙালীদের বাউলগানে
লালন একটি অনন্য নাম। বাউলগানের ভুবনে
লালনাদির চাহিদা
ও গ্রহণযোগ্যতা উত্তরোত্তর
বেড়েই চলেছে। সাথেসাথে সুমহান
মরমীকবির আলোচনা
ও পর্যালোচনাও বেড়েই
চলেছে। বলতে হয় যেমন বাঙালী মহাপুরুষ তেমন
বাংলা মধুর নাম ‘লালন’।
লালন (রূপ)বি লালক, পালক, পোষক, অত্যন্ত যত্নসহকারে পালন, মাতৃজঠরে ভ্রূণ লালনপালন করে যে বিণ যত্নকারী, সেবাকারী, লালনকারী, পালনকারী, লালনপালনকারী, পোষণকারী, প্রতিপালনকারী, পরিচর্যাকারী, শুশ্রূষাকারী, সেবাশুশ্রূষাকারী (প্র) উনবিংশ শতাব্দির বাঙালী প্রসিদ্ধ মরমীকবি লালনসাঁইজি।
লালন (রূপ)বি লালক, পালক, পোষক, অত্যন্ত যত্নসহকারে পালন, মাতৃজঠরে ভ্রূণ লালনপালন করে যে বিণ যত্নকারী, সেবাকারী, লালনকারী, পালনকারী, লালনপালনকারী, পোষণকারী, প্রতিপালনকারী, পরিচর্যাকারী, শুশ্রূষাকারী, সেবাশুশ্রূষাকারী (প্র) উনবিংশ শতাব্দির বাঙালী প্রসিদ্ধ মরমীকবি লালনসাঁইজি।
সাঁই পরিভাষার
উৎপত্তি
ঈশ্বর বা উপাস্য দুই প্রকার। যথা- ১.সাঁই ও ২.কাঁই। সাঁই মানবদেহের শ্বেতবর্ণের জীবজল- যা স্বাধীষ্ঠানচক্রে যথা সময়ে অবতরণ করে, জঠরে সন্তান বা ভ্রূণ লালন পালনের দায়িত্ব পালন করেন। কাঁই মানবদেহের কালোবর্ণের জীবজল- যা যথা সময়ে অবতরণ করে বসিধ বা রজকে বের হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। কাঁইয়ের আদেশেই প্রতি মাসেমাসে বসিধ প্রতীতি (রজ) মর্ত্যে আগমন করেন।
সাদা (রূপ)বিণ শুভ্র, শ্বেত, অকুটিল, আড়ম্বরহীন, অলংকারহীন, শান্ত, ভদ্র, নম্র বি শ্বেতবর্ণ, সহজ (রূ)বি সাঁই (দেত)বি পালনকর্তা।
ঈশ্বর (রূপ)বি স্রষ্টা, সৃষ্টিকর্তা, সাঁই, কাঁই, লালন, প্রভু, পতি, স্বামী, প্রণয়ী, আপন, আত্মীয়, গুরু, গোঁসাই, বিধাতা, অধিপতি, হৃদয়েশ, সনাতনীদের পবিত্রস্থান বা মৃতের নামের পূর্বে ব্যবহার্য মহিমাজ্ঞাপক ‘ ঁ’ চিহ্ন বিণ শ্রেষ্ঠ, প্রধান, অন্যতম (পরি) সাঁই ও কাঁই কিংবা বিষ্ণু ও ব্রহ্মাকে একত্রে ঈশ্বর বলা হয়। তবে সাধারণত ঈশ্বর বলতে সাঁই বা বিষ্ণুকেই বুঝান হয় (প্র) মহাদেব একাদশবার ভিন্নভিন্ন মূর্তি ধারণ করে একাদশ রুদ্র নামে খ্যাত হন। যথা- ১.অজ ২.একপাদ ৩.অহিব্রধœ ৪.পিনাকী ৫.অপরাজিত ৬.ত্র্যম্বক ৭.মহেশ্বর ৮.বৃষাকপি ৯.শম্ভু ১০.হর ও ১১.ঈশ্বর। অর্থাৎ ঈশ্বর হলো মহাদেবের ১১টি আকার বা মূর্তির মধ্যে একটি আকার বা মূর্তি (রূ)বি সাঁই (দেত)বি পালনকর্তা স্ত্রী ঈশ্বরী {বাং.ইষ্টি+বাং.বর> ইষ্টর>}
সাদা + ঈশ্বর = সাঈ (উভয় শব্দের প্রথম বর্ণ গ্রহণ করে)। ‘সাঈ’ শব্দটির দীর্ঘই (ঈ) বর্ণটির দীর্ঘস্বর পড়তে কষ্ট হয় বিধায় পড়ার সুবিধার্থ দীর্ঘই (ঈ) বর্ণটিকে হ্রস্বই (ই) বর্ণ দ্বারা পরিবর্তন করে এবং সে পরিবর্তনের চিহ্নস্বরূপ একটি চন্দ্রবিন্দু “ ঁ ” গ্রহণ করে ‘সাঈ’ শব্দটি হতে “সাঁই” পরিভাষাটি সৃষ্টি করা হয়েছে। ‘সাঁই’ শব্দ হতেই ‘সাঁইজি’ পরিভাষাটির উৎপত্তি। বাংলা ‘সাঁই’ এবং তুর্কি ‘জি (ﺠﻰ)’ শব্দদ্বয় একত্রিত করে (সাঁই+জি)/ “সাঁইজি” পরিভাষাটি সৃষ্টি করা হয়েছে।
সাঁই অব্য বাতাস চলাচলের অনুচ্চার ধ্বনি {ধ্বন্যা}
ঈশ্বর বা উপাস্য দুই প্রকার। যথা- ১.সাঁই ও ২.কাঁই। সাঁই মানবদেহের শ্বেতবর্ণের জীবজল- যা স্বাধীষ্ঠানচক্রে যথা সময়ে অবতরণ করে, জঠরে সন্তান বা ভ্রূণ লালন পালনের দায়িত্ব পালন করেন। কাঁই মানবদেহের কালোবর্ণের জীবজল- যা যথা সময়ে অবতরণ করে বসিধ বা রজকে বের হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। কাঁইয়ের আদেশেই প্রতি মাসেমাসে বসিধ প্রতীতি (রজ) মর্ত্যে আগমন করেন।
সাদা (রূপ)বিণ শুভ্র, শ্বেত, অকুটিল, আড়ম্বরহীন, অলংকারহীন, শান্ত, ভদ্র, নম্র বি শ্বেতবর্ণ, সহজ (রূ)বি সাঁই (দেত)বি পালনকর্তা।
ঈশ্বর (রূপ)বি স্রষ্টা, সৃষ্টিকর্তা, সাঁই, কাঁই, লালন, প্রভু, পতি, স্বামী, প্রণয়ী, আপন, আত্মীয়, গুরু, গোঁসাই, বিধাতা, অধিপতি, হৃদয়েশ, সনাতনীদের পবিত্রস্থান বা মৃতের নামের পূর্বে ব্যবহার্য মহিমাজ্ঞাপক ‘ ঁ’ চিহ্ন বিণ শ্রেষ্ঠ, প্রধান, অন্যতম (পরি) সাঁই ও কাঁই কিংবা বিষ্ণু ও ব্রহ্মাকে একত্রে ঈশ্বর বলা হয়। তবে সাধারণত ঈশ্বর বলতে সাঁই বা বিষ্ণুকেই বুঝান হয় (প্র) মহাদেব একাদশবার ভিন্নভিন্ন মূর্তি ধারণ করে একাদশ রুদ্র নামে খ্যাত হন। যথা- ১.অজ ২.একপাদ ৩.অহিব্রধœ ৪.পিনাকী ৫.অপরাজিত ৬.ত্র্যম্বক ৭.মহেশ্বর ৮.বৃষাকপি ৯.শম্ভু ১০.হর ও ১১.ঈশ্বর। অর্থাৎ ঈশ্বর হলো মহাদেবের ১১টি আকার বা মূর্তির মধ্যে একটি আকার বা মূর্তি (রূ)বি সাঁই (দেত)বি পালনকর্তা স্ত্রী ঈশ্বরী {বাং.ইষ্টি+বাং.বর> ইষ্টর>}
সাদা + ঈশ্বর = সাঈ (উভয় শব্দের প্রথম বর্ণ গ্রহণ করে)। ‘সাঈ’ শব্দটির দীর্ঘই (ঈ) বর্ণটির দীর্ঘস্বর পড়তে কষ্ট হয় বিধায় পড়ার সুবিধার্থ দীর্ঘই (ঈ) বর্ণটিকে হ্রস্বই (ই) বর্ণ দ্বারা পরিবর্তন করে এবং সে পরিবর্তনের চিহ্নস্বরূপ একটি চন্দ্রবিন্দু “ ঁ ” গ্রহণ করে ‘সাঈ’ শব্দটি হতে “সাঁই” পরিভাষাটি সৃষ্টি করা হয়েছে। ‘সাঁই’ শব্দ হতেই ‘সাঁইজি’ পরিভাষাটির উৎপত্তি। বাংলা ‘সাঁই’ এবং তুর্কি ‘জি (ﺠﻰ)’ শব্দদ্বয় একত্রিত করে (সাঁই+জি)/ “সাঁইজি” পরিভাষাটি সৃষ্টি করা হয়েছে।
সাঁই অব্য বাতাস চলাচলের অনুচ্চার ধ্বনি {ধ্বন্যা}
লালন সাঁইজির
দীক্ষাগুরু
মহাত্মা লালনসাঁইজি রচিত অনেক লালনের মধ্যে তাঁর দীক্ষাগুরু সিরাজ (প্রদীপসাধু) সাঁইজির নাম উল্লেখ করেছেন। যেমন- “১আঠারো মুক্বামের মাঝে একটি রূপেরবাতি জ্বলছে সদায়, নাই তেল তার নাই তুলা আজগুবি হচ্ছে উদয়। ২মুক্বামের মধ্যে মুক্বাম, শূণ্যশিখর বলি যার নাম, বাতি লন্ঠন সেথায় মুদাম, ত্রিভুবনে কিরণ দেয়। ৩দিবানিশি নয় প্রহরে, একরূপে চাররূপ ধরে, বর্ত্ম থাকতে দেখলি নারে, ঘুরে মরলি বেদের ধোঁকায়। ৪যে জানে সে বাতির খবর, ঘুচেছে তার নয়নের ঘোর, সিরাজ সাঁইজি কয় লালনরে তোর, দৃষ্ট হয় না মনের দ্বিধায়।”
সিরাজ [ﺴﺮﺍﺝ] (রূপ)বি দীপ, প্রদীপ, বাতি, আলো, আলোকবর্তিকা (আল) শ্রেষ্ঠব্যক্তি, প্রধানব্যক্তি (প্র) বাঙালী তাপসকুল শিরোমণি মহানসাধক মহাত্মা লালনসাঁইজির মহামান্য গুরুদেব {আ}
সিরাজ সাঁই (রূপ)বি প্রদীপসাঁই, সর্বজ্ঞ, সর্বজ্ঞানী, মহাজ্ঞানী, আলোকময় সাঁই, আলোর দিশারী (প্র) বাঙালী তাপসকুল শিরোমণি ও মহানসাধক মহাত্মা লালনসাঁইজির মহামান্য গুরুদেব {আ.সিরাজ.ﺴﺮﺍﺝ+ বাং.সাঁই}
সিরাজ সাঁইজি (রূপ)বি সর্বজ্ঞ, সর্বজ্ঞানী, মহাজ্ঞানী, আলোকময় সাঁই, আলোর দিশারী (প্র) বাঙালী তাপসকুল শিরোমণি মহানসাধক ও মরমীকবি মহাত্মা লালনসাঁইজির মহামান্য গুরুদেব {আ.সিরাজ.ﺴﺮﺍﺝ+ বাং.সাঁই+ তু.জি.ﺟﻰ}
আধ্যাত্মিকবিদ্যায় জ্ঞানকে আলোক বলে। জ্ঞান যেহেতু একজন স্বর্গীয় অবতার বা ঐশি অবতার বা দৈবদূত বা বিশিষ্ট প্রতীতি বিধায় তাকে সাঁইজি বলা হয়। এছাড়াও জ্ঞানকে জ্ঞানবাবু ও জ্ঞানমহাশয় ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়ে থাকে। মহাত্মা লালনসাঁইজির মহামান্য গুরুদেব মহাত্মা প্রদীপসাঁইজি, আমাদের মতো আকৃতিগত ও মূর্তমান মানুষ ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন বৈক্তিকসদস্যের মধ্যে অবস্থিত একজন বিশিষ্ট প্রতীতি। মানবীয় প্রতীতি জ্ঞান হলো আমাদের জ্ঞানশক্তি। লালনসাঁইজি জ্ঞানকে গুরুরূপে গ্রহণ করে তার রূপকনামকরণ করেন আলোকবর্তিকা বা সিরাজ (ﺴﺮﺍﺝ)। তিনি সে আলোকবর্তিকা বা প্রদীপকে (ﺴﺮﺍﺝ) শিক্ষাদীক্ষার গুরুরূপে লোকসমাজে প্রকাশ করেছেন। আমরা এ বিষয়ের গূঢ়রহস্যটি ‘আধ্যাত্মিকবিদ্যা পরিচিতি’ গ্রন্থটির ষড়াশ্রয়ের রূপাশ্রয়ে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেছি। শুধু আমাদের বাঙালী মরমীকবি মহাত্মা লালনসাঁইজিই নয় বিশ্বের অধিকাংশ মহামানবগণই ষড়াশ্রয়ের সর্বশেষস্তর রূপাশ্রয়ে গিয়ে জ্ঞানকে গুরুপদে এবং মনকে শিষ্যপদে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিজের নাম পরিচয় ও জন্মদিবস ইত্যাদি রূপকার্থে নির্মাণ করেন। জ্ঞানের পরিবর্তে যে সব অন্ধরা কোন মানুষকে বা কোন প্রয়াতব্যক্তিকে গুরুরূপে গ্রহণ করে, তার পূজা করে বা মনকে যারা গুরুরূপে গ্রহণ করে, তারা কখনো জ্ঞানার্জন করতে তো পারবেই না বরং জ্ঞানের ধারে কাছেও যেতে পারবে না।
আদিলালনকর্তা
ভ্রূণাকারে সৃষ্টি হওয়ার পর এবং ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মাতৃজঠরে সন্তান লালনপালনকারী সাঁইকে আদিলালনকর্তা বলে। যেমন- লালন, মুহাম্মদ, লোকনাথ।
অন্তলালনকর্তা
ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সন্তান যার নিকট লালিতপালিত হয় তাকে অন্তলালনকর্তা বলে। যেমন- পিতা-মাতা, পালকপিতা, পালকমাতা ইত্যাদি বিধায় মরমীকবি লালনসাঁইজি বিরচিত লালনাদির মধ্যে আমরা ভনিতারূপে ব্যবহৃত যে লালনের পরিচয় পাই তিনি আমাদের মতো মূর্তমান মানুষ বটে কিন্তু লালনাদির মধ্যে যে লালনের সন্ধান দান করা হয়েছে, তিনি যে আদৌ আমাদের মতো দেহধারী ও আকৃতিযুক্ত মূর্তমান মানুষ নন, তার প্রমাণস্বরূপ আমরা লালনসাঁইজির কয়েকটি পদ তুলে ধরছি।
১.“সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে, লালন বলে জাতির কিরূপ, দেখলেম না এ নজরে।”
২.“দেহের আত্মাকর্তা কারে বলি, কোন্ মুক্বামে তার সে গলি আওনা যাওনা, সে মহলে লালন কোন্জন, তাও লালনের ঠিক হলো না।”
ওপরোক্ত উদ্ধৃতি অংশে ‘লালন বলে’, ‘লালন কয়’ ও ‘লালনের ঠিক হলো না’ ইত্যাদি বাঙালী মরমীকবি লালন কিন্তু ‘লালন কী জাত’ ও ‘লালন কোন্জন’ ইত্যাদি মরমীকবি ব্যক্তিলালন নয় বরং তিনি স্বয়ং ‘লালন সাঁইজি’ বা সারাবিশ্বের পালনকর্তা সাঁই। তিনি স্বয়ং মানবের উপাস্য। তিনিই অনন্ত নামের অধিকারী, সারাবিশ্বের সব ভাষায় তাঁর অনন্ত নাম রয়েছে। এ ‘লালন’ কে ঢুঁড়ে বের করায় সাধক বা উপাসকের প্রকৃত উপাসনা। বাংভারতের সাধারণমানুষ বা সাধারণ বাউল শিল্পিগণ তো পরের কথা অনেক গবেষকও ‘মরমীকবি লালন’ ও ‘উপাস্য লালন’ এর মধ্যে ব্যবধান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তদ্রূপ ‘ব্যক্তি বিষ্ণু’ ও ‘উপাস্য বিষ্ণু’ এর মধ্যে ব্যবধান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন পুরানিরা। তদ্রূপ ‘ব্যক্তি মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ)’ ও ‘উপাস্য মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ)’ এর মধ্যে ব্যবধান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন কুরানীরা বিধায় বিভিন্ন শাস্ত্রীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একের পর এক সৃষ্টি হচ্ছে দল ও উপদলের।
আবার তিনি যে আমাদের মতই একজন মানুষ তার প্রমাণস্বরূপ আমরা লালনসাঁইজির কয়েকটি লালনের পদ তুলে ধরতে পারি। যেমন- “জগৎ বেড়ে জাতের কথা, লোকে গৌরব করে যথাতথা, লালন সে জাতের ফাতা, বিকিয়েছে সাধবাজারে॥” এরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও মতানৈক্যের নিরসন করতে হলে, আগে আমাদের লালন-সত্তাটির প্রকারভেদ জানতে হবে। আরো জানতে হবে একজন মূর্তমান মানুষ বা প্রাণী একই সময়ে বিশ্বের সর্বত্র সমানভাবে বিরাজ করতে পারেন না। কিন্তু দৈবিকা বা প্রতীতিগণ তাদের দেহ না থাকায়, তাঁরা একই সময়ে বিশ্বের সর্বত্র সমানভাবে বিরাজ করতে পারেন। মূর্তমান জীব কখনো জাতি কুল ও মানের ঊর্ধ্বে হতে পারে না। জাতি কুল ও মানের ঊর্ধ্বে হতে পারেন একমাত্র দৈবিকা বা প্রতীতিগণ। যেহেতু তাদের মূর্তমান দেহ নেই। আমাদের আলোচ্য লালন হলেন মানবদেহ নামক দেবালয়ের একজন বিশিষ্ট দৈবিকা বা প্রতীতি- যাকে আরবিতে মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺪ), ফার্সিতে খোদা (ﺨﺪﺍ) এবং ইংরেজিতে God বলে।
সাঁইজি উপাধি গ্রহণের তাৎপর্যমহাত্মা লালনসাঁইজি রচিত অনেক লালনের মধ্যে তাঁর দীক্ষাগুরু সিরাজ (প্রদীপসাধু) সাঁইজির নাম উল্লেখ করেছেন। যেমন- “১আঠারো মুক্বামের মাঝে একটি রূপেরবাতি জ্বলছে সদায়, নাই তেল তার নাই তুলা আজগুবি হচ্ছে উদয়। ২মুক্বামের মধ্যে মুক্বাম, শূণ্যশিখর বলি যার নাম, বাতি লন্ঠন সেথায় মুদাম, ত্রিভুবনে কিরণ দেয়। ৩দিবানিশি নয় প্রহরে, একরূপে চাররূপ ধরে, বর্ত্ম থাকতে দেখলি নারে, ঘুরে মরলি বেদের ধোঁকায়। ৪যে জানে সে বাতির খবর, ঘুচেছে তার নয়নের ঘোর, সিরাজ সাঁইজি কয় লালনরে তোর, দৃষ্ট হয় না মনের দ্বিধায়।”
সিরাজ [ﺴﺮﺍﺝ] (রূপ)বি দীপ, প্রদীপ, বাতি, আলো, আলোকবর্তিকা (আল) শ্রেষ্ঠব্যক্তি, প্রধানব্যক্তি (প্র) বাঙালী তাপসকুল শিরোমণি মহানসাধক মহাত্মা লালনসাঁইজির মহামান্য গুরুদেব {আ}
সিরাজ সাঁই (রূপ)বি প্রদীপসাঁই, সর্বজ্ঞ, সর্বজ্ঞানী, মহাজ্ঞানী, আলোকময় সাঁই, আলোর দিশারী (প্র) বাঙালী তাপসকুল শিরোমণি ও মহানসাধক মহাত্মা লালনসাঁইজির মহামান্য গুরুদেব {আ.সিরাজ.ﺴﺮﺍﺝ+ বাং.সাঁই}
সিরাজ সাঁইজি (রূপ)বি সর্বজ্ঞ, সর্বজ্ঞানী, মহাজ্ঞানী, আলোকময় সাঁই, আলোর দিশারী (প্র) বাঙালী তাপসকুল শিরোমণি মহানসাধক ও মরমীকবি মহাত্মা লালনসাঁইজির মহামান্য গুরুদেব {আ.সিরাজ.ﺴﺮﺍﺝ+ বাং.সাঁই+ তু.জি.ﺟﻰ}
আধ্যাত্মিকবিদ্যায় জ্ঞানকে আলোক বলে। জ্ঞান যেহেতু একজন স্বর্গীয় অবতার বা ঐশি অবতার বা দৈবদূত বা বিশিষ্ট প্রতীতি বিধায় তাকে সাঁইজি বলা হয়। এছাড়াও জ্ঞানকে জ্ঞানবাবু ও জ্ঞানমহাশয় ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়ে থাকে। মহাত্মা লালনসাঁইজির মহামান্য গুরুদেব মহাত্মা প্রদীপসাঁইজি, আমাদের মতো আকৃতিগত ও মূর্তমান মানুষ ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন বৈক্তিকসদস্যের মধ্যে অবস্থিত একজন বিশিষ্ট প্রতীতি। মানবীয় প্রতীতি জ্ঞান হলো আমাদের জ্ঞানশক্তি। লালনসাঁইজি জ্ঞানকে গুরুরূপে গ্রহণ করে তার রূপকনামকরণ করেন আলোকবর্তিকা বা সিরাজ (ﺴﺮﺍﺝ)। তিনি সে আলোকবর্তিকা বা প্রদীপকে (ﺴﺮﺍﺝ) শিক্ষাদীক্ষার গুরুরূপে লোকসমাজে প্রকাশ করেছেন। আমরা এ বিষয়ের গূঢ়রহস্যটি ‘আধ্যাত্মিকবিদ্যা পরিচিতি’ গ্রন্থটির ষড়াশ্রয়ের রূপাশ্রয়ে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেছি। শুধু আমাদের বাঙালী মরমীকবি মহাত্মা লালনসাঁইজিই নয় বিশ্বের অধিকাংশ মহামানবগণই ষড়াশ্রয়ের সর্বশেষস্তর রূপাশ্রয়ে গিয়ে জ্ঞানকে গুরুপদে এবং মনকে শিষ্যপদে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিজের নাম পরিচয় ও জন্মদিবস ইত্যাদি রূপকার্থে নির্মাণ করেন। জ্ঞানের পরিবর্তে যে সব অন্ধরা কোন মানুষকে বা কোন প্রয়াতব্যক্তিকে গুরুরূপে গ্রহণ করে, তার পূজা করে বা মনকে যারা গুরুরূপে গ্রহণ করে, তারা কখনো জ্ঞানার্জন করতে তো পারবেই না বরং জ্ঞানের ধারে কাছেও যেতে পারবে না।
আদিলালনকর্তা
ভ্রূণাকারে সৃষ্টি হওয়ার পর এবং ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মাতৃজঠরে সন্তান লালনপালনকারী সাঁইকে আদিলালনকর্তা বলে। যেমন- লালন, মুহাম্মদ, লোকনাথ।
অন্তলালনকর্তা
ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সন্তান যার নিকট লালিতপালিত হয় তাকে অন্তলালনকর্তা বলে। যেমন- পিতা-মাতা, পালকপিতা, পালকমাতা ইত্যাদি বিধায় মরমীকবি লালনসাঁইজি বিরচিত লালনাদির মধ্যে আমরা ভনিতারূপে ব্যবহৃত যে লালনের পরিচয় পাই তিনি আমাদের মতো মূর্তমান মানুষ বটে কিন্তু লালনাদির মধ্যে যে লালনের সন্ধান দান করা হয়েছে, তিনি যে আদৌ আমাদের মতো দেহধারী ও আকৃতিযুক্ত মূর্তমান মানুষ নন, তার প্রমাণস্বরূপ আমরা লালনসাঁইজির কয়েকটি পদ তুলে ধরছি।
১.“সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে, লালন বলে জাতির কিরূপ, দেখলেম না এ নজরে।”
২.“দেহের আত্মাকর্তা কারে বলি, কোন্ মুক্বামে তার সে গলি আওনা যাওনা, সে মহলে লালন কোন্জন, তাও লালনের ঠিক হলো না।”
ওপরোক্ত উদ্ধৃতি অংশে ‘লালন বলে’, ‘লালন কয়’ ও ‘লালনের ঠিক হলো না’ ইত্যাদি বাঙালী মরমীকবি লালন কিন্তু ‘লালন কী জাত’ ও ‘লালন কোন্জন’ ইত্যাদি মরমীকবি ব্যক্তিলালন নয় বরং তিনি স্বয়ং ‘লালন সাঁইজি’ বা সারাবিশ্বের পালনকর্তা সাঁই। তিনি স্বয়ং মানবের উপাস্য। তিনিই অনন্ত নামের অধিকারী, সারাবিশ্বের সব ভাষায় তাঁর অনন্ত নাম রয়েছে। এ ‘লালন’ কে ঢুঁড়ে বের করায় সাধক বা উপাসকের প্রকৃত উপাসনা। বাংভারতের সাধারণমানুষ বা সাধারণ বাউল শিল্পিগণ তো পরের কথা অনেক গবেষকও ‘মরমীকবি লালন’ ও ‘উপাস্য লালন’ এর মধ্যে ব্যবধান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তদ্রূপ ‘ব্যক্তি বিষ্ণু’ ও ‘উপাস্য বিষ্ণু’ এর মধ্যে ব্যবধান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন পুরানিরা। তদ্রূপ ‘ব্যক্তি মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ)’ ও ‘উপাস্য মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺩ)’ এর মধ্যে ব্যবধান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন কুরানীরা বিধায় বিভিন্ন শাস্ত্রীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একের পর এক সৃষ্টি হচ্ছে দল ও উপদলের।
আবার তিনি যে আমাদের মতই একজন মানুষ তার প্রমাণস্বরূপ আমরা লালনসাঁইজির কয়েকটি লালনের পদ তুলে ধরতে পারি। যেমন- “জগৎ বেড়ে জাতের কথা, লোকে গৌরব করে যথাতথা, লালন সে জাতের ফাতা, বিকিয়েছে সাধবাজারে॥” এরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও মতানৈক্যের নিরসন করতে হলে, আগে আমাদের লালন-সত্তাটির প্রকারভেদ জানতে হবে। আরো জানতে হবে একজন মূর্তমান মানুষ বা প্রাণী একই সময়ে বিশ্বের সর্বত্র সমানভাবে বিরাজ করতে পারেন না। কিন্তু দৈবিকা বা প্রতীতিগণ তাদের দেহ না থাকায়, তাঁরা একই সময়ে বিশ্বের সর্বত্র সমানভাবে বিরাজ করতে পারেন। মূর্তমান জীব কখনো জাতি কুল ও মানের ঊর্ধ্বে হতে পারে না। জাতি কুল ও মানের ঊর্ধ্বে হতে পারেন একমাত্র দৈবিকা বা প্রতীতিগণ। যেহেতু তাদের মূর্তমান দেহ নেই। আমাদের আলোচ্য লালন হলেন মানবদেহ নামক দেবালয়ের একজন বিশিষ্ট দৈবিকা বা প্রতীতি- যাকে আরবিতে মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺪ), ফার্সিতে খোদা (ﺨﺪﺍ) এবং ইংরেজিতে God বলে।
আধ্যাত্মিকজ্ঞানে একজন জ্ঞানী পাকাগুরুর নিকট হতে ভেদবিদ্যা বা পরাবিদ্যা বা আধ্যাত্মিকবিদ্যা বা ভেদবিধান অর্জন করে শুভযোগে যেসব সাধক সাঁইয়ের প্রত্যক্ষ দর্শনলাভ করতে সক্ষম হন- সেসব সাধককেই সাঁইজি উপাধি প্রদান করা হয়। সাঁইজি পরিভাষাটি মূলতঃ রূপক সাহিত্যের- ১.আউল ২.বাউল ৩.নাড়া ও ৪.সাঁইজি- এ চতুর্সাধন পথের সর্বশেষ স্তর। সাঁইয়ের প্রত্যক্ষদর্শনকারী বা পরোক্ষদর্শনকারী উভয়কেই সাঁইজি উপাধিতে ভূষিত করা হয়। যেমন- এম.বি.বি.এস (M.B.B.S) উত্তীর্ণ না হয়ে কেউ নামের শেষে পদবিরূপে এম.বি.বি.এস (M.B.B.S) লেখতে পারেন না। তদ্রূপ কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাঁইদর্শন না করে সাঁইজি উপাধি গ্রহণ করতে পারেন না। যদি কেউ এরূপ করেন তবে ভুয়া এম.বি.বি.এস (M.B.B.S) এর মতো তিনিও ভুয়া সাঁইজি।
কোন সাধকের সাঁই দর্শনলাভের পর প্রমাণসাপেক্ষ কোন বিশেষ বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে ‘সাঁইজি’ উপাধি প্রদান করা হয়। সাঁইজির চিহ্নস্বরূপ দীক্ষাগুরুর পক্ষ থেকে সাধককে শ্বেতবর্ণের উষ্ণীষ এবং শ্বেতবর্ণের ওড়নি প্রদান করা হয়। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উক্ত সাধককে গুরুপদে অধিষ্ঠিত করা হয়। আরবিভাষায় এ অনুষ্ঠানকে খিলাফত (ﺨﻼﻔﺕ) বলে। গরুপদপ্রাপ্ত বা প্রতিনিধিত্বপ্রাপ্ত বা খিলাফত (ﺨﻼﻔﺕ) প্রাপ্ত সাধককে আরবিভাষায় প্রতিনিধি বা খলিফা (ﺨﻟﻔﺔ) বলে এবং বাংলা ভাষায় গুরু বা গোঁসাই বলা হয়। কোন সাঁইজি সাধকের শিষ্য সাধনবলে গুরুর নিকট হতে ‘সাঁইজি’ উপাধিলাভ করার পর গুরু ও শিষ্য এক ও অভিন্ন স্তর প্রাপ্ত হন। অতঃপর গুরু ও শিষ্য পরস্পরকে প্রণাম ও অভিবাদন করে পরস্পরকে সম্মান প্রদর্শন করেন। সাঁইদর্শনলাভকারী শিষ্য সে বৈঠক হতেই গুরুপদ প্রাপ্ত হন। অতঃপর গুরুর আদেশ অনুসারে তিনিও সাধারণ মানুষকে আধ্যাত্মিকশিক্ষাদীক্ষা প্রদান করতে আরম্ভ করেন। যে সাধক সাঁইদর্শনলাভ করতে সক্ষম হবেন তিনিই সাঁইজি উপাধি প্রাপ্ত হবেন। সাঁইজি পরিভাষাটি কারো জন্যই নির্দিষ্ট নয়। ‘সাঁইজি’ উপাধিটি সব সাঁই দর্শনকারী সাধকের উপাধি বিশেষ। সাঁইজি স্তরে যারা উন্নীত হবেন তারাই সাঁইজি উপাধি প্রাপ্ত হবেন।
সাঁইজি পরিভাষাটির আরবি অনুবাদ হলো- নায়িবে রাসুল (ﻧﺎﺌﺐﺮﺴﻭﻞ) এবং ইংরেজি অনুবাদ হলো- Godship। সারাবিশ্বের লালনপালনকর্তার নামই হলো লালন বিধায় তাঁর নামের আগে ও পরে যত প্রকার পদবিই স্থাপন করা হোক না কেন তবুও ন্যূন হবে। কিন্তু কোন মূর্ত্যমান মানুষকে আমরা কখনো সাঁইজি বলতে পারি না। তবে যারা মানবদেহ হতে উদ্ঘাটিত সাঁই-সত্তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দর্শনলাভ করেছেন তাঁদের উপাধিই সাঁইজি। তাঁদের সাঁইজি বলে সম্বোধন করাতে কোন দোষ নেই।
তথ্যসূত্রঃ পবিত্র লালন
সংকলকঃ বলন কাঁইজি
সংকলকঃ বলন কাঁইজি
Thank you Mr. Raja
Mukherjee (Alipurduar) for Sharing this valuable content with me.
lalon fakir, lalon kakir biography, lalon fakir hisory, spiritual lalon, lalon geeti, lalon phakir, lalon phakir biography, lalon phakir history, lalon fokir, lalon fokir biography, lalon fokir history,
ReplyDelete